অর্থনীতি

রিজার্ভ রক্ষায় ডলার বিক্রি কমাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষায় ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আপাতত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করবে না। এদিকে ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদন যেমন বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনি বিদেশি এয়ারলাইন্সের আয় স্থানান্তর, ব্যক্তিগত ভ্রমণ, এমনকি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য টিউশন ফিসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে অন্তত ১০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠানের টাকা থাকলেও ডলার না পাওয়ায় বকেয়া পরিশোধে সমস্যায় পড়ছেন তারা। কিছু বিদেশী এয়ারলাইন্স ২১৪ মিলিয়ন ডলারের সমান আয় ধরে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা থাকলেও ব্যাংক থেকে ডলার না পাওয়ায় তারা আয় করতে পারছে না। ডলারের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে পারছে না। এসব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক অভিযোগ আসছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে বিক্রি ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বিক্রি হয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে গড়ে ২২ বিলিয়ন বিক্রয়। এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত দুই মাস পাঁচ দিনে দুই বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে।

বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার খরচ ৯ শতাংশের বেশি। আবার রুপির বিপরীতে প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। এ কারণে এখন যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ আসছে তার চেয়ে বেশি ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে আমদানি অনেক কমে গেলেও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্বস্তি পাচ্ছে না।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমদানি কমে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমেছে।

চলতি হিসাবের ঘাটতিও কমেছে। তবে বড় রাজস্ব ঘাটতির কারণে সার্বিক চাপ রয়েছে। কিছুদিন আগেও ডলারে ঋণ পেতে ৫ থেকে ৬ শতাংশ খরচ হতো। এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। আবার রুপির বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। এই পরিস্থিতির শেষ কোথায় কেউ জানে না।

ডলার সংকটের এমন পরিস্থিতিতে গতকাল থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র পটুয়াখালীতে পায়রা উৎপাদন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল কয়লা আমদানি করতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সারাদেশে লোডশেডিং অনেক বেড়ে গেছে। ফলে ডলার সংকটের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।

জানা গেছে, গতকাল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া অর্থ দিয়ে এই হিসাব প্রকাশ করে। যাইহোক, শীঘ্রই আইএমএফ-এর বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে, ইডিএফ সহ বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া অর্থ রিজার্ভে দেখানো যাবে না। আবার, আগামী এক বছরে যে পরিমাণ দায় পরিশোধ করতে হবে তা দূর হবে। মোট, নেট রিজার্ভ বর্তমানে প্রায় ২০ বিলিয়ন। তবে আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় ধাপ ছাড়ার আগে আগামী সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ২৫.৩২ বিলিয়নে নিয়ে যাওয়ার শর্ত রয়েছে।

ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস ছবিতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতির চিত্র ফুটে উঠেছে। সাধারণভাবে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব উদ্বৃত্ত ছিল। গত অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ১৯৩ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে কোনো উদ্বৃত্ত নেই, বিপরীতে ঘাটতি রয়েছে ২২২ মিলিয়ন ডলার। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও সামগ্রিক বাণিজ্য ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৭ মিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে সার্বিক লেনদেন ঘাটতি ছিল মাত্র ৩১০০ মিলিয়ন ডলার।

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার বলেন, সরকারি এলসিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা পাচ্ছে। তবে প্রাইভেট এলসিতে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মজুদ ছাড়া এলসি খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো খুবই সতর্ক। এখন শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলা প্রায় বন্ধ।