• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    রাস্তায় সমীক্ষার গোলকধাঁধা

    সড়কটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকা টেকনাফ পর্যন্ত চলে। সড়কপথে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক। একের পর এক দুর্ঘটনা, যানজটে সময় অপচয়সহ নানা কারণে বর্তমান দুই লেনের সরু সড়কটি ‘মৃত্যু ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। সমস্যা সমাধানে সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ, বাইপাস নির্মাণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করার পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আশ্চর্য শোনালেও বাস্তবতা হলো দুই লেনের সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে গত ৯ বছরে অন্তত চারবার জরিপ করা হয়েছে।

    সর্বশেষ জরিপটি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ গত বছরের মাঝামাঝি। কিন্তু এখনো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করেনি। এরপর জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে সওজের মতবিরোধের কারণে চার লেন প্রকল্পের প্রাথমিক অগ্রগতিও থমকে গেছে।

    মহাসড়কে যানজট এড়াতে চারটি জনবহুল স্থানে ছয় লেনের বাইপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে চন্দনাইশের দোহাজারী, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও চকরিয়ায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। তবে এসব স্থানে ছয় লেনের বাইপাস নির্মাণ করতে চায় জাইকা। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়ে সওজ বলেন, মহাসড়কটি চার লেনের করার পরিকল্পনা রয়েছে। জাইকার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ছয় লেনের বাইপাস চার লেনের সড়কে প্রবেশ পথে যানজট সৃষ্টি করবে। চার লেনের বাইপাস নির্মাণের জন্য সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে সওজ। এতে কাজ না হওয়ায় জাইকাকে বাইপাস করে সরকারী অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেন সওজ।

    এদিকে চার লেন ও বাইপাস নিয়ে জটিলতা থাকলেও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ছয় লেনের চারটি বড় ও মাঝারি সেতু নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সওজ। ইতিমধ্যে সড়কের চন্দনাইশে বরুমতি খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পটিয়ার ইন্দ্রপুল, দোহাজারী শঙ্খ নদী ও চকরিয়া মাতামুহুরী নদীর ওপর তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে এ চারটি স্থানে বাইপাস নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল। তবে এখন সড়কের কিছু অংশ চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে।

    সওজের চট্টগ্রামের দোহাজারী সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, জাইকার পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন বিষয়টি সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আরও বলেন, একটি প্রকল্পের আওতায় শিকলবাহা ক্রসিং থেকে পটিয়া বাইপাস পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ১৮ ফুট রাস্তা ৩৪ ফুট করা হচ্ছে। একই প্রকল্পের আরেকটি ধাপে পটিয়া বাইপাস থেকে সাতকানিয়া কেরানীহাট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে।

    সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে ২০১৩-১৫ সালে সুইডেনের একজন পরামর্শক কর্তৃক জরিপ করা হয়। সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তখন খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ১০,৫০০ কোটি টাকা। সুজ এটিকে আবার ‘নিয়ন্ত্রিত-অ্যাক্সেস হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করে। এতে মহাসড়কের দৈর্ঘ্যও কমে যায়। পরিবর্তিত দৈর্ঘ্য ধরা হয় ১৩৬ কিমি। এ জন্য ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হয়। ওই নকশায় মহাসড়কের প্রস্থ ৮২ ফুট। উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন রাখা হয়েছে। এছাড়া ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুট ওভারব্রিজ ও দুটি ফ্লাইওভারের কথা বলা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৩১৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এরপর জি-টু-জি ভিত্তিতে একে চার লেনে উন্নীত করার জন্য জাপানি কোম্পানি মারুবেনি জরিপ চালায়। সরকার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এ জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে প্রকল্পের ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনকে দেয়। কিন্তু আগের দুটির মতো সেই উদ্যোগও হারিয়ে যায়। অবশেষে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগকে জরিপ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই জরিপ প্রতিবেদন ইতিমধ্যে সওজে জমা দেওয়া হয়েছে বলে প্রফেসর ড. কিন্তু এখনও গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করা যায়নি।

    সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, জরিপ শেষে বুয়েট চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নিয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে। একটি প্রস্তাবে বিদ্যমান সড়কটি বহাল রেখে সার্ভিস রুটসহ ছয় লেনে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।

    মন্তব্য করুন