• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ

    রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গেও কথা হয়েছে। কিন্তু তারা রাষ্ট্রপতি হতে চায় না।

    এ অবস্থায় বড় কোনো চমক না থাকলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বা প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড.মসিউর রহমানের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য এই অবস্থানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম এখন পর্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসছে।

    আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারণী নেতা ও সংসদ সদস্য বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দলের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে সভাপতি পদে দলের প্রার্থীতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিসভার একজন প্রভাবশালী সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একজনকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন করতে চান, যিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। এ জন্য ইতিমধ্যে দুজন বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা রাজি হননি। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একজনের আইনগত বিষয়ে ব্যাপক দক্ষতা রয়েছে।

    এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শুরু থেকেই আলোচনা। মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

    তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসায় এই তালিকা সংক্ষিপ্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে মশিউরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আলোচনা রয়েছে বলে জানা গেছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও ডা. তাদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হবে বলে মনে করছেন অনেকে। এ দুজনের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, তাদের রাজধানী ঢাকায় থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়েছে। যে কারণে তাদের একজনকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি করার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

    রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের দায়িত্ব নিয়ে কে বঙ্গভবনে যাবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগে দুই ধরনের মত রয়েছে। একটি বড় অংশ নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন রাজনীতিবিদকে দেখতে চায়। আরেকটি অংশ রাষ্ট্রপতি পদের জন্য আমলাদের প্রত্যাশা করছে।

    রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি যেহেতু দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তাই তার জায়গায় নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

    সংবিধানে রাষ্ট্রপতির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সে অনুযায়ী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

    এরপর এ তালিকা ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১২ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হন না। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন।

    রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে সংসদ সদস্য হতে হবে এমন নয়। তবে সংসদ সদস্যদের একজনকে প্রস্তাবক এবং একজনকে সমর্থক হতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকেন।

    ১৯৯১ সাল থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের প্রয়োজন নেই, যখন সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়েছিল। সব সময় সরকারি দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে আসছেন। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন এটা নিশ্চিত। সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ ৩৫০ আসনের মধ্যে ৩০২টি আওয়ামী লীগের দখলে। সাত সদস্য পদত্যাগ করায় সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।

    সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। রাষ্ট্রপ্রধান হলেও রাষ্ট্রপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তবে সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে বাধ্য নন। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ নির্বাচনের সময় থেকে পাঁচ বছর।

    মন্তব্য করুন