বিবিধ

রায়ের পর্যবেক্ষণ।দুর্নীতির মাধ্যমে স্ত্রীর নামে সম্পত্তির পাহাড় গড়েছেন প্রদীপ

সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস দম্পতির এক বিরল ‘দানের’ খেলা। মাঝে মাঝে শ্বশুরবাড়িতে টাকা দিতেন। অনেক সময় জামাই বা মেয়েকে কোটি কোটি টাকা দেন শ্বশুর। উপহার হিসেবে দিয়েছেন দেড় কোটি টাকার একটি ছয়তলা বাড়ি ও একটি প্রাইভেটকার। বোনকে লাখ লাখ ডলার দান করলেন ভাই! এতে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি গৃহবধূ হয়েও কোটিপতি বনে যান।

আদালতের দৃষ্টিতে তিনি বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় দুদক কমিশনে মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করলেও কোনো নথিপত্র দিতে না পারায় তাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও তার বাবা অজিত কুমার করণ, একজন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী, এই মেয়েটিকে একটি বাড়ি, একটি গাড়ি দিয়ে ‘বিরল’ ভালবাসা দেখিয়েছেন, অন্য দুটি সন্তানকে কিছু দেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই।

বুধবার প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে দুদকের একটি মামলার রায় ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রদীপ পুলিশে থাকাকালীন তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন এবং সেই অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তোলেন। এই প্রদীপের একটা বড় অংশ তার স্ত্রী চুমকি ও শ্বশুর অজিতকে দান করে বৈধ করার চেষ্টা করেছে।

জানা গেছে, অজিত তার মেয়ে চুমকিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় ‘শান্তিকুঞ্জ’ নামে সাড়ে ছয়তলা বাড়ি উপহার দিয়েছেন। এর আগে প্রদীপ তার শ্বশুরবাড়িকে ৯ লাখ টাকা দান করেছিলেন। পরে এই মেয়েকে ভালোবেসে বাবা অজিত তাকে একটি প্রাইভেটকার উপহার দেন। একইভাবে চুমকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ১২০ভরি স্বর্ণালঙ্কার উপহার পান। উপহার ও অনুদানের পাশাপাশি চুমকি তার ভাইয়ের কাছ থেকে ৪৯৮,০০০ টাকা ঋণও পান।

এভাবে বছরের পর বছর বাবা, ভাই ও স্বামী একে অপরকে শুধু দান করেছেন! তবে অন্য দুই ছেলে উজ্জ্বল ও শিমুলকে কোনো সম্পদ দান করার রেকর্ড আদালতে পেশ করতে পারেননি অজিত। এই অনুদানের বিপরীতে অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে না পারায় প্রদীপ ও চুমকি আটকা পড়ে। তাদের জরিমানা ও কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং তাদের বিপুল সম্পদও বাজেয়াপ্ত করা হয়।

পাঁচটি পুকুরে দেড় কোটি টাকা আয়ের তথ্য মিথ্যা : চট্টগ্রামের বয়াখালীতে সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় পাঁচটি পুকুর ইজারা নিয়েছেন চুমকি। আয়কর নথিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১০ বছরে তারা দেড় কোটি টাকা আয় করেন। তবে বোয়ালখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার দুদককে বলেন, এর পেছনে কোনো সঠিক প্রমাণ নেই।

গৃহবধূ চুমকি নিজেকে কমিশন ব্যবসায়ী বললেও আদালতে প্রমাণ করতে পারেননি। ২০১৩-১৪ সালে তিনি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে কমিশন ব্যবসা শুরু করেন এবং ওই বছরে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয়ের দাবি করলেও কমিশন ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক লেনদেন—কোনো কিছুই আদালতে দাখিল করতে পারেননি। তিনি সরকারী কর্মকর্তার স্ত্রী হিসাবে ব্যবসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের পারমিট, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, বিল, ভাউচার, অফিস, গুদাম সংক্রান্ত রেকর্ডগুলিও উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন।

মন্তব্য করুন