রাজবাড়ীতে নেতাদের দ্বন্দ্ব, দুই ধারায় বিভক্ত বিএনপি
রাজবাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপির মধ্যে কোন্দল চলছে। নেতাকর্মীরা দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে দুই দল আলাদাভাবে একই কর্মসূচি পালন করছে। একদিকে নেতাদের মধ্যে মতভেদ, অন্যদিকে মামলা-হামলার চাপে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিরক্ত ও বিভ্রান্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ। যিনি জেলা বিএনপি কার্যালয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অপর দলের নেতৃত্বে রয়েছেন রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিরুল হক সাবু। আলী নওয়াজ মাহমুদ খৈয়ামের বাসভবনে এই দলটি কর্মসূচি পালন করে।
নেতাদের মধ্যে এই বিভাজনের প্রভাব পড়েছে দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোতেও। খৈয়াম গ্রুপে রয়েছেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খায়রুল আনাম বকুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, কৃষক দলের আহ্বায়ক আইয়ুব আলী। অন্যদিকে লিয়াকত গ্রুপে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিখন, যুবদলের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, কৃষক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম।
জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্র থেকে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ামকে সভাপতি ও হারুন অর রশিদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের জেলা কমিটি গঠন করা হয়। দুই বছর পর ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর কমিটি বিলুপ্ত করে জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা লিয়াকত আলীকে আহ্বায়ক ও অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দুলালকে সদস্য সচিব ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দুলালকে সদস্য সচিবের পদ থেকে সরিয়ে কামরুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাড়ে তিন বছর পার হলেও এখনো আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে চলছে জেলা বিএনপি।
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিএনপিতে এ ধরনের বিভক্তি বা সংঘাত চান না। তারা বলছেন, নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দূর করতে হবে। তাহলে বিএনপি শক্তিশালী হবে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আহসান হাবীব বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। আমরা একই মতাদর্শ অনুসরণ করলেও ভেতরে একটু প্রতিযোগিতা আছে। এই প্রতিযোগিতা সর্বোত্তম সংযম রাখা হয়. তা অতিক্রম করা খারাপ। নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য নিরসনে আলোচনা চলছে।
জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা চলছে। বড় দলে এমন প্রতিযোগিতা থাকাটা অযৌক্তিক নয়। রাজনৈতিক কারণে সব সমস্যার সমাধান হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতি নাসিরুল হক সাবু বলেন, দল ভালো যাচ্ছে। যাইহোক, কিছু দ্বিধা আছে. বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচনের আগে দলের বিভেদ মিটে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বলেন, বড় দলগুলোতে সমস্যা রয়েছে। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
দলে দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি একটি গ্রুপে পড়েছেন। গ্রুপিং দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন বহুবার। ১৯ মে দুই পক্ষ একত্রে মিলিত হয়। শিগগিরই জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগও নেওয়া হবে।