রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল: জরাজীর্ণ ভবনে রোগীর আর্তনাদ, ৩০ কোটি টাকার নতুন ভবন অব্যবহৃত
রাঙ্গামাটি জেলার উন্নত চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার শিকার। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হওয়ায়, হাসপাতালটিতে শয্যার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে রাঙ্গামাটি শহরে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে প্রথমে ৫০ শয্যা ছিল, কিন্তু পরে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়, তবে অবকাঠামো এবং পরিসেবার মান একই রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন এখানে ২০০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি হন, যাদের অনেকেই কোনও শয্যায় জায়গা পান না। রোগীদের মেঝে এবং করিডোরে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করা হয়। হাসপাতালের পুরাতন ভবনের পাশে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৫০ শয্যার নতুন ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু এখনও খোলা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এই ভবনটি খোলা না হওয়ায় চিকিৎসা সেবার উপর চাপ আরও বেড়েছে। যদি এটি খোলা হত, তাহলে রোগীদের সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হত। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি আমার মাকে অসুস্থ বলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। চার দিন ধরে তিনি মেঝেতে শুয়ে আছেন। শয্যার অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কখন বিছানা পাওয়া যাবে জানি না।’ অমর জ্যোতি চাকমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জেলা হাসপাতালের কী করুণ অবস্থা! রোগীরা মেঝেতে শুয়ে আছেন। সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা, আমরা আরেকটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় পাচ্ছি। আর পাশেই নির্মিত নতুন ভবনটি কেন চালু হচ্ছে না, আমরা তা নিয়ে ভাবি না। যদি এটি ব্যবহার করা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে কেন এটি তৈরি করা হল?’ রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক প্রধান ডা. শওকত আকবর বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে মূলত ৫০টি শয্যা রয়েছে।’ ১৯৮৪ সালে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও, অবকাঠামো ও সরঞ্জামের দিক থেকে আমরা এখনও ৫০ শয্যার স্তরে রয়েছি। মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর রোগীদের চাপ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাঙ্গামাটি নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা চট্টগ্রামের রাউজান এবং রাঙ্গুনিয়া থেকেও রোগীরা আসছেন। আমরা করিডোরে জায়গা দিতে পারছি না, তবে রোগীদের সর্বোত্তম পরিসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ নূয়েন খীসা বলেন, ‘রাঙ্গামাটি জেলার মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা পরিসেবা নিশ্চিত করার জন্য খুব শীঘ্রই একটি নতুন ভবন খোলা হবে। নতুন ভবনটি খোলা হলে, হাসপাতালের এই সীমাবদ্ধতা দূর হবে।’ রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ মানুষ এই একটি জেনারেল হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। চিকিৎসা পরিসেবার এত শোচনীয় অবস্থা সত্ত্বেও নতুন ভবনটি না খোলা নিয়ে সর্বস্তরে প্রশ্ন উঠেছে। রোগীরা যেমন অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি সরকারি ব্যবস্থাপনাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।