• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    রমজান হল একনিষ্ঠ তওবা করার শ্রেষ্ঠ সময়

    মানুষ তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। সে তওবা করল এবং আল্লাহর দিকে ফিরে গেল। আত্মশুদ্ধিতে আত্মনিয়োগ করে। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নেক কাজের প্রতি আগ্রহী হওয়া। এটি মানুষ এবং ঈশ্বরের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। আর এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে পবিত্র রমজান মাস। তাই তাওবা ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে রমজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    আর যে আত্মশুদ্ধির চেতনায় আমরা রমজানকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, সেই আত্মশুদ্ধির কতটুকু আমরা অর্জন করতে পেরেছি, তা রমজানের শেষ পর্বে দেখা দরকার। আমরা সবাই জানি, আত্মশুদ্ধি এবং কাজের জন্য গভীর অনুশোচনার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে, যাকে আমরা তওবা বলি।

    রমজানের বিগত দিনগুলোতে আমরা কতটা বিশ্বস্তভাবে তওবা করেছি? শুধু কয়েক দিন বাকি. এই সময়ে আমরা আন্তরিকভাবে তওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করবেন এবং রমজানের প্রতিশ্রুত প্রতিদান দিয়ে আমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন।

    পাপ করা মানুষের স্বভাব। মানুষ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পাপ করে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। পাপে লেগে থাকা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চাওয়াটা অস্বাভাবিক। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ভালো-মন্দ, যেমন পাপ ও পুণ্যের উপকরণ দিয়ে। তাই পাপ হতে পারে। তবে যা করতে হবে তা হলো যতটা সম্ভব পাপ ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা। তবে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনো পাপ সংঘটিত হলে সাথে সাথে অনুতপ্ত হয়ে অনুতপ্ত হওয়া আবশ্যক।

    আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাতে মানুষ সৎ ও ধার্মিকভাবে জীবনযাপন করে এবং শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পাপ করে। তখন সে বুঝতে পারবে যে সে পাপ করেছে এবং তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হবে। আর আল্লাহ পাপীকে ক্ষমা করবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি যদি কোনো পাপ না করতে, তাহলে আল্লাহ তোমার পরিবর্তে এমন জাতি সৃষ্টি করতেন যারা পাপ করত এবং অনুতপ্ত হতো।

    গুনাহগার বান্দা যদি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল। আল্লাহ ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। ক্ষমাপ্রার্থী। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে এ কথা ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং অধিকতর পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।

    আল্লাহতায়ালা কুরআনের অন্যত্র বলেছেন, তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করেন। – সূরা শুরা ২৫

    বান্দা যখন পাপ করে এবং অনুতপ্ত না হয়ে পাপে লেগে যায় তখন আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। আর বান্দা যখন তার গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়, তখন আল্লাহ খুব খুশি হন। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট পেয়ে তোমাদের একজন যতটা খুশি হন, আল্লাহ তাআলা একজন বান্দার তওবা করে বেশি খুশি হন। -বোখারী ৬৩০৯

    যারা অবিরাম পাপাচারে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে সম্পূর্ণ গাফেল হয়ে পড়ে তাদের জন্য অনুতপ্ত হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। গুনাহ যত বড়ই হোক না কেন, আন্তরিকভাবে তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যারা সারা বছর পাপাচারে লিপ্ত হয়ে জীবনকে কলুষিত করেছে তাদের জন্য এই মহিমান্বিত রমজান তাওবার সুবর্ণ সুযোগ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। – সূরা জুমার ৫৩

    যদি কেউ বান্দার হক লঙ্ঘন করে, তবে সে যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তবে আল্লাহ সেই গুনাহ ক্ষমা করবেন না। বরং এ কারণে বান্দাকে তার অধিকারে সন্তুষ্ট করতে হবে বা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অন্যথায় আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।

    তওবা গুনাহ মুছে দেয় এবং বান্দাকে নিষ্পাপ করে। আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক গভীর করে। তাই রাসুল (সা.) উম্মতকে বেশি বেশি তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আমি দিনে ১০০ বার তওবা করি। – মুসলিম ৭০৩৪

    রাসূল (সাঃ) এর কোন পাপ ছিল না। তিনি নির্দোষ ছিলেন। তবুও তিনি অনুতপ্ত হতেন। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতকে ক্ষমা চাইতে এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শিক্ষা দিতেন। তাই আসুন রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশনা মেনে বেশি বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হই। আর এই কাজের জন্য রমজান মাসই উত্তম সময়।

    মন্তব্য করুন