• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    রমজানে লোডশেডিং সহনীয় রাখার পরামর্শ

    দেশে স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ বিভিন্ন উদ্যোগের নির্দেশ দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ও বেসরকারি অফিসে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ এই গ্রীষ্ম এবং রমজান লোডশেডিংমুক্ত হবে না। বিদ্যুৎ বিভাগ এই সময় লোডশেডিং সহনীয় রাখার পরামর্শ দিয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে মাঠ প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য সচিব বিভাগীয় কমিশনারদের সাথে বৈঠক করেন। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফৌজুল কবির খান বলেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ সরকারের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির উপর নির্ভর করবে।

    সূত্র অনুযায়ী, গত মাসের শেষে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনারদের পাশাপাশি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে গ্রীষ্মের চাহিদা, রমজান মাসে সরবরাহ, বিশেষ করে সেহরি ও ইফতারের সময় সরবরাহ, সেচের সময় সরবরাহ এবং সারা দেশে কৃষি সেচ পাম্পে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য বলা হয়েছে। ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

    সভায় বলা হয়েছে, সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার এবং বিদ্যুতের অপচয় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের নিয়মিত সভায় বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, যাতে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়।

    অপচয় রোধে বাড়িঘর, অফিস-আদালত, পেট্রোল পাম্প এবং সিএনজি গ্যাস স্টেশন, শপিংমল, বাজার, শপিংমল, মডেল মসজিদ এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে দিনের বেলায় সূর্যালোকের ব্যবহার বাড়াতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি বা কোম্পানিগুলিকে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি বা তার বেশি রেখে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য লিফলেট বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।

    রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্ম এবং রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাবে কিনা তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর ভিত্তি করে সরবরাহ পরিকল্পনা তৈরি করে। এখন, যদি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না করা হয়, তাহলে লোডশেডিং করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

    এই কর্মকর্তারা মনে করেন না যে গ্রীষ্ম এবং রমজান মাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে একাধিক সভা করার পরেও এটি কার্যকর হবে। কেউ কেউ বলছেন যে প্রতি বছর তাপ বাড়ছে। এই সময়ে বিদ্যুৎ না পেলে মানুষ বিভিন্ন বিদ্যুৎ স্থাপনা এবং অফিসে হামলা চালায়। আমরা আশা করি সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে।

    বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর গ্রীষ্মকালে প্রায় ১৮,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে। তবে সূত্র বলছে যে এ বছর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য লড়াই হবে। কারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। জ্বালানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ অর্থ বিভাগের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির উপর নির্ভর করবে।

    খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার কারণে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা প্রাথমিক জ্বালানি কিনতে পারছেন না। সরকারের কাছে বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়ছে। গ্যাস সংকটও তীব্রতর হচ্ছে। আর্থিক সংকটের কারণে পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের সরবরাহও কমছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য উচ্চমূল্যের ডিজেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ফার্নেস তেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করতে হতে পারে।

    এই বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফৌজুল কবির খান আমাদের সময়কে বলেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ সরকারের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির উপর নির্ভর করবে। পিডিবি প্রতি ইউনিট গড়ে ১২ টাকার বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকের কাছে গড়ে ৮.৫ টাকায় বিক্রি করে। এই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির মাধ্যমে পিডিবির পক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা কঠিন। ফলস্বরূপ, জ্বালানি আমদানি এবং গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকির অর্থ প্রাপ্তির উপর অনেকটা নির্ভর করে।

    তিনি আরও বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কয়লা, প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল এবং এলএনজি আমদানির চেষ্টা করছি। তবে তা অর্থ প্রাপ্তির উপর নির্ভর করবে।

    Do Follow: greenbanglaonline24