• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সরবরাহে বিঘ্নের উদ্বেগ

    দেশের কিছু বড় প্রতিষ্ঠান কার্যকরী মূলধনের ঘাটতি, ডলার সংকট ও উচ্চমূল্য এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটের সম্মুখীন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার সমস্যা। কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলতে না পারায় তারা কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে আগামী রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কিছু ব্যাংক বিশেষ করে ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক এলসি খোলায় সহযোগিতা করছে না। এতে তেল-চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্য, রড-সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রী, ওষুধ, সিরামিক ও বস্ত্র খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

    দেশবন্ধু গ্রুপ সম্প্রতি এলসি খুলতে না পারার বিষয়ে সার্বিক তথ্য তুলে ধরে সরকারের উচ্চপর্যায় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ও যথাযথ নির্দেশনাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়।

    এর আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিও পাঠানো হয়। অবশেষে গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার নং ১৬/২০২২ অনুযায়ী, দেশবন্ধু গ্রুপ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যাংককে গ্রুপের ঋণ পুনর্নির্ধারণের জন্য চিঠি দিয়েছে। তবে তিনটি ব্যাংক- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি- ঋণ পুনর্নির্ধারণ করেনি। পরিবর্তে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি প্রতিবেদনে তাদের শ্রেণীবদ্ধ দেখানো হয়েছে।

    এ অবস্থায় দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প পরিবার দেশবন্ধু গ্রুপ বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্ট সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশবন্ধু গ্রুপকে ঋণ পুনঃতফসিল ও ব্যবসা পরিচালনার নির্দেশ দেন।

    এদিকে, গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক দেশবন্ধু গ্রুপের কোম্পানিগুলোর সুদ মওকুফ, তাদের ব্যাংক হিসাব নিয়মিতকরণ এবং নিয়মিত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উল্লিখিত তিনটি ইসলামী ব্যাংককে চিঠি দেয়। এই চিঠির আলোকে গ্রুপটি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো তা করেনি।

    এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি শ্রমিকদেরও স্থবির ভিত্তিতে বেতন দিতে হচ্ছে।

    দেশবন্ধু গ্রুপের সাবেক সচিব ও নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মমতাজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। এরপর দ্রব্যমূল্যকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা; কিন্তু তা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দেশের শিল্প খাত, যা চারমুখী সংকটের সম্মুখীন। তিনি বলেন, এলসি খুলতে না পারায় ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ তাদের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকাভিত্তিক কয়েকটি শিল্প গ্রুপ রয়েছে। রমজান মাস আসছে, দেশে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হবে; কিন্তু তদনুসারে, পণ্য চালানের জন্য এলসি খোলার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়।

    Do Follow: greenbanglaonline24