• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে উদ্বেগ

    মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির হারে, স্থির আয়ের লোকেরা শেষ মেটাতে লড়াই করছে। এরই মধ্যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক ও কর বাড়িয়েছে সরকার। এতে জনগণের ওপর ভ্যাটের চাপ আরও বেড়েছে। নাগরিকদের তাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ধাপে ভ্যাটের টাকা গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আবারও সুদের হার বাড়ানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। আবার গত বছরের তুলনায় এবার ডলারের দাম বেশি এবং বিশ্ববাজারেও দাম বেশি। এতে পণ্য আমদানি ব্যয় বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে চিন্তিত ক্রেতা-বিশেষজ্ঞরা। দাম নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় বাজারে কারসাজি ঠেকাতে প্রতিটি পর্যায়ে মনিটরিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

    মাজনুনুর রহমান নামের রাজধানীর বেসরকারি খাতের এক শ্রমিক বলেন, সাধারণত প্রতি বছর রমজানের শুরুতে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়ে যায়। এ বছর রমজানের আগে সরকার শতাধিক নতুন পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করায় জনজীবনে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ভাবছি আসন্ন রমজানে না খেয়ে রোজা রাখতে হবে কিনা।

    কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, রমজানে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে উদ্বেগ থাকে। এরই মধ্যে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। যদিও সরকার বলছে ভ্যাট আরোপের কারণে দাম বাড়বে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দাম বেড়েছে। প্রতি বছর রমজানকে ঘিরে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। এবারও সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য না থাকলেও জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে জনজীবনে। এ ছাড়া অনেক করপোরেট গ্রুপ ৫ আগস্টের পর বাজারে নেই। তাদের শূন্যস্থান পূরণের কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে আমদানি খাতে অনেক কারিগরি সমস্যা রয়েছে। তাদের ব্যাপারেও আমরা দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখি না।

    ট্যারিফ কমিশন বলছে এটা স্থিতিশীল থাকবে

    রমজানে বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত ৯ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায় বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। এতে বলা হয়েছে, রমজানে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের নিম্নমুখী প্রবণতার পাশাপাশি পণ্য বাজারে দাম সহনশীল রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে পরিস্থিতি ইতিবাচক। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।

    দেশের আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় সাধারণ মানুষ স্থানীয় বাজারে কম দামে পণ্য কিনতে পারবে। সরকার সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করলেও প্রতিবেদনে সে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

    বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান সোমবার বলেন, রমজান মাসে পণ্যের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

     তিন মাস আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেসব পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর কোনো প্রভাব রমজানের পণ্যে পড়বে না। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে এ বছর রমজানে পণ্যের দাম কমবে।

    ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার মান বজায় রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমদানিতে ডলারের সরকারি দর ছিল ১২০ টাকা। তবে সংকটের কারণে আমদানিকারকদের আনঅফিসিয়ালি ডলার কিনতে হয়েছে ১২৩-১২৪ টাকায়। এখন আমদানির সরকারি রেট ১২৩ টাকা। এই দামে আমদানির জন্য ডলার পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ডলার সংকটও কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী দেশে প্রায় ২.১৬৮ বিলিয়ন ডলার রয়েছে, যা গত আগস্টের শুরুতে ছিল ২.৪৮০ মিলিয়ন ডলার। এ সময়ে বকেয়া বৈদেশিক ঋণের বড় অংশ (৩.৫ বিলিয়ন ডলার) পরিশোধ করা হয়েছে।

    Do Follow: greenbanglaonline24