যোগ্যরাই মনোনয়ন পাবেন, ঐক্যবদ্ধ থেকে কার্যক্রম জোরদার করুন—রাজশাহী বিভাগের নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমানের আহ্বান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজশাহী বিভাগ থেকে কেন্দ্রে ডাকা প্রার্থীদের দলের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার জন্য তাদের এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ডাকা নেতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই নির্দেশনা দেন। সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন প্রার্থীর সাথে কথা বলার পর এ কথা জানা গেছে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির সামনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাইকে ধৈর্য ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আসন্ন নির্বাচন কঠিন হবে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সর্বদা ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, দলের ভাবমূর্তি সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। বিএনপি জনগণের দল। জনগণের জন্য আমাদের অনেক কাজ করার আছে। সকলের এখনই সেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগের দিন সংক্ষিপ্ত নোটিশে, রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের জন্য তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছিল। বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দনের মাধ্যমে তাদের দ্রুত চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। দলীয় সূত্র আরও জানতে পেরেছে যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও কলের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রার্থীরা ছাড়াও, বিএনপির স্থায়ী কমিটির মাত্র তিনজন সদস্য, মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন, ইকবাল মাহমুদ খান টুকু এবং সেলিমা রহমান এই বিশেষ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তবে, এই সভায় কোনও প্রার্থী বক্তব্য দেওয়ার বা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি। জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের বিপরীতে, প্রতিটি আসন থেকে গড়ে তিন থেকে চারজন প্রার্থীকে ডাকা হয়েছিল। কিছু আসন থেকে মাত্র একজনকে ডাকা হয়েছিল। জানা গেছে, বিভাগের মধ্যে রাজশাহীতে ৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এছাড়াও নাটোরে ৪টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩টি, নওগাঁ জেলায় ৬টি, জয়পুরহাট জেলায় ৩টি, পাবনা ৬টি, সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬টি এবং বগুড়া জেলায় সর্বোচ্চ ৭টি সংসদীয় আসন রয়েছে। সোমবারের বিশেষ সভায় এই আসনগুলি থেকে ১৩১ জন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ডাকা হয়েছে। নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসন থেকে কেবল চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুশ তালুকদার দুলুকে ডাকা হয়েছে। রাজশাহী-২ (মহানগরী) আসন থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু এবং মহানগর বিএনপির প্রাক্তন আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইসহাককে ডাকা হয়েছে। রাজশাহীর বাকি ৫টি আসন থেকে তিন-চারজনকে ডাকা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী এলাকায় ফিরে এসে মাঠে গণসংযোগ শুরু করেছেন। অনেকেই ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। রাজশাহী-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সকলকে অতিরিক্ত উৎসাহী না হওয়ার এবং দলীয় সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দল যাদের মনোনয়ন দেবে তাদের কেবল ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা না করে দলীয় আমানত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং আমানত রক্ষার জন্য মাঠে নামতে হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, এলাকায় ফিরে আসার পর যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের অতি উৎসাহের সাথে তা করা উচিত নয়। এতে দলের ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
রাজশাহী মহানগর বিএনপির প্রাক্তন আহ্বায়ক, প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাদের ডাকা হয়েছে তাদের এলাকায় গিয়ে বলা শুরু না করার জন্য বলেছেন। যদি এটি ঘটে, তাহলে দলীয় নেতা-কর্মী এবং জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে।”

