• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে একটি নতুন প্রবেশদ্বার,’কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতু’

    বাঁকখালী নদীর ওপর নবনির্মিত ‘কক্সবাজার খুরুশকুল’ সংযোগ সেতুর গেট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ক্রুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশাপাশি প্রস্তাবিত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের কাজ আরেক ধাপ এগিয়েছে।

    এই সেতু ‘কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতুর যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দুই পক্ষের মানুষের দীর্ঘ স্বপ্ন অবশেষে দৃশ্যমান হলো। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র তিন মিনিটের পথ। তবেই দেখতে পাবেন বাঁকখালী নদীর উপর নবনির্মিত সবচেয়ে সুন্দর সেতুটি। আর সেতুর দুই প্রান্তে নির্মিত হয়েছে নতুন সড়ক।

    নদীর দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগের জন্য খুলে যাচ্ছে ‘বাঁকখালী সেতু’র দরজা। সেতুটিকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে স্থানীয়রা।

    খুরুশকুল এলাকার বাসিন্দা এম আর খোকন বলেন, নবনির্মিত এই সেতুর মাধ্যমে আমাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। এখানে আগে কোনো রাস্তা ছিল না। ব্যবসা করতে নৌকায় কক্সবাজার শহরে যেতাম। আগে খুরুশকুলে জমির দাম কম ছিল। কিন্তু এখন সড়ক ও সেতুর কারণে জমির দাম বেড়েছে বহুগুণ। এখন শুধু এই সেতুর কারণে খুরুশকুল এলাকা শহরের মতো হয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা গাড়িতে করে মাত্র ৩ মিনিটে পৌঁছে যাব কক্সবাজার শহরে।

    তিনি আরও বলেন, খুরুশকুলে একই সঙ্গে লবণ ও চিংড়ি উৎপাদন হচ্ছে। এখন আমরা এগুলো কক্সবাজারে নিয়ে গিয়ে খুব দ্রুত বিক্রি করতে পারব। যেখানে কক্সবাজার যেতে আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা সময় লাগতো, সেখানে সেতুটি কক্সবাজারে যাওয়া সহজ করবে।

    গতকাল সন্ধ্যায় উদ্বোধনের পর বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত সেতু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো সেতুটি রঙে সাজানো হয়েছে। রঙ প্রয়োগ করা হয়েছে। ব্রিজটি আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদেরও ভিড় করতে দেখা গেছে সেতুটি এক নজর দেখার জন্য।

    কস্তুরঘাট এলাকার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা এসএম জসিম উদ্দিন বলেন, কস্তুরঘাট এলাকায় আগে আবর্জনা থাকত। সেখান থেকে সরকারের উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান সরকার যে সেতুটি নির্মাণ করেছে তা শুধু দুই তীরের মানুষকেই সংযুক্ত করবে না, দুই তীরে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। এখানে একটি খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পও রয়েছে। এটাও একটা অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

    স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন খান জানান, সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯। এর নির্মাণকাল ছিল ৩১ আগস্ট ২০২১। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। পরে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেতু নির্মাণের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। তবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়।

    তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার-খুরুশকুল সংযোগ সেতুর দৈর্ঘ্য ৫৯৫ মিটার। সেতুটি ১১টি স্প্যানের উপর নির্মিত। এর মধ্যে ৩টি স্প্যান ৬৫ মিটার এবং বাকি ৮টি স্প্যান ৫০ মিটার নদীর মূল অংশে। ডাবল সেল এবং ইসি বক্স গার্ডার দিয়ে নির্মিত সেতুটি ফাইল ক্যাপ ওয়াটার লেভেল থেকে 8 মিটার নিচে রাখা হয়েছে। উজান থেকে আসা পলি ও বালি দিয়ে এটি ভরাট হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় নৌচলাচলের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না।

    তিনি দাবি করেন, দেশে নির্মিত এ ধরনের সেতু এটিই প্রথম। এলজিইডির নিজস্ব নকশায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সেতুর নকশা বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা রেটিং বা পরীক্ষিত।

    তিনি আরও বলেন, ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর দুই পাশে ২ হাজার ৭৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৯০০ মিটার এবং খোরুশকুলে ১ হাজার ৮৫০ মিটার।

    নির্বাহী প্রকৌশলী. মামুন খান আরও বলেন, কক্সবাজার জেলা একটি পর্যটন শহর। বিশ্বজুড়ে পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার জেলা। কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাঁকখালী নদী। যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল সেটি ছিল বাঁকখালী নদীর তীরে, যা ছিল পতিত জমি। সেই স্থানে এখন এলজিইডি কর্তৃক একটি দর্শনীয় সেতু বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং আমরা মানের বিষয়ে জিরো টলারেন্স রেখে এই সেতুটি নির্মাণ করেছি। এই সেতু নির্মাণ যা আমাদের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং এই সেতুটি কক্সবাজার শহরকে অন্য দিকে সম্প্রসারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

    নির্বাহী প্রকৌশলী. মামুন খান আরও বলেন, কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখানে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। যারা উদ্বাস্তু হিসেবে ছিল তাদের মাথাব্যথা করছে বর্তমান সরকার। সেক্ষেত্রে খুরুশকুল এলাকায় ৪ হাজার ৪০৯ পরিবারকে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সেতু ব্যবহার করে তারা সহজেই কক্সবাজারে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারে।