• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    যে গাড়িটি স্কুলছাত্রকে চাপা দিয়েছে সেটি রাজস্ব কর্মকর্তার।চালকের বিচারের দাবিতে, শিক্ষার্থীদের অবরোধ

    রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিজি প্রেসের সামনের সড়কে স্কুলছাত্র আলী হোসেনকে চাপা দেওয়া মাইক্রোবাসটি শনাক্তের পর জব্দ করা হয়েছে। গাড়িটি রাজস্ব বিভাগের একজন প্রধান সহকারী পদমর্যাদার কর্মকর্তার। তবে পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না। ঘটনার দিন ঘাতক গাড়িটি মহাখালী থেকে সাতরাস্তামুখী সড়কে যাচ্ছিল। স্কুলছাত্র আলীকে রাস্তা পার হতে দেখে চালক জিয়াউল হক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন।

    তাকে ধাক্কা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে পালিয়ে যায়।

    দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে গাড়িটির পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনা সংলগ্ন সড়কের ৩৭টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশের পর্যালোচনায় মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো জি-১৪-৫৮২৮) শনাক্ত করা হয়। গাড়ির সামনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের স্টিকার লাগানো ছিল।

    পুলিশের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, গাড়িটি রাজস্ব কর্মকর্তার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাইক্রোবাসের মালিক সাভার থেকে প্রতি রোববার ঢাকায় কাজে আসতেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করেন। এরপর গাড়িটি সাভারে ফিরে যায়। সেখানে কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা পারিবারিক প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার করেন। ঘটনাস্থল থেকে কাকরাইল যাওয়ার রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজে গাড়িটি ধরা পড়ে। সোমবার আশুলিয়ার বিশমাইল এলাকা থেকে মাইক্রোবাসটি আটক করে চালককে আটক করা হয়।

    এদিকে স্কুল ছাত্র আলী হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল ফার্মগেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি দায়ী চালকের বিচার দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং এ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। মানুষ কষ্ট পায়। ঘাতক মাইক্রোবাস চালককে গ্রেফতারের খবর শোনার পর অবরোধ তুলে নেয় এবং দেড়টা থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

    তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আলী হোসেন তার বাবা-মায়ের সঙ্গে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়ায় থাকতেন। রোববার সকালে স্কুলব্যাগ নিয়ে ফার্মগেটে কোচিং করতে বাড়ি থেকে বের হন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিজি প্রেসের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান তিনি। এ ঘটনায় তার বাবা আজমির মাতবর বাদী হয়ে শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন। অজ্ঞাতপরিচয় চালককে আসামি করা হয়।

    এ ঘটনায় গতকাল নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার এইচএম আজিমুল হক বলেন, আলীকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়িটি পালিয়ে যায়। চালক মোবাইল ফোন বন্ধ করে আশুলিয়ার বিশমিলে গাড়ি রেখে আত্মগোপনে চলে যান। গাড়ির সামনে রাজস্ব বোর্ড লেখা একটি স্টিকার রয়েছে, তারপর গাড়ির মালিক রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা কিনা সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মালিকের নাম পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। তবে তা সঠিক কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে।

    আলী হোসেনকে ধাক্কা দেওয়া গাড়ির চালককে গ্রেপ্তার, তার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফার্মগেটে আল রাজী হাসপাতালের সামনে সরকারি বিজ্ঞান উচ্চ বিদ্যালয় ও তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। . দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটের পূর্ব পাশে সড়কে বসে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। বিক্ষুব্ধ জনতা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মোরলো কেন’, ‘আমার ভাই কাবরে, খুনি বাইরে’, ‘আর কত প্রাণ ঝরবে, রাস্তা নিরাপদ হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। তাদের অনেকের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।

    আলীর সহপাঠী আল রাফি রাগান্বিত কণ্ঠে বলে, ‘আমরা স্কুল-কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হই। তিনি যে জীবিত দেশে ফিরতে পারবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর কত শিক্ষার্থী প্রাণ হারাবে, সড়ক নিরাপদ হবে। কয়েক বছর ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হলেও আমরা নিরাপদ সড়ক পাইনি।’ অপর এক শিক্ষার্থী জানান, আলীকে সড়কে গাড়িতে করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তার পাশ দিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি চলে যায় কিন্তু কেউ না থামিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আলীকে অনেক পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

    দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট থেকে বিজয় সারনির দিকে মিছিল করে। সেখানেও বিক্ষোভ করেন তারা। আন্দোলনের শুরু থেকেই ফার্মগেট থেকে বিজয় সরণি সড়ক পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কাছেই গাড়ি থামল। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ কষ্ট পায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে। কিন্তু চালককে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তারা সড়ক থেকে সরতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ শিক্ষার্থীরা বিজয় সরণি থেকে ফার্মগেটে ফিরে আসে। তারা প্রতিবাদ করতে থাকে। দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ চালককে আটকের খবর দেয়। পরে তারা রাস্তা ছেড়ে দেয়।

    মন্তব্য করুন