যুবকের কারণে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীনতা
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ৩৪০ ফুট উঁচু একটি বিদ্যুৎ টাওয়ারের উপরে উঠেছিলেন শংকর বেপারী বাহাদুর নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। এর ফলে পুরো উপজেলায় ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। নেছারাবাদ ফায়ার সার্ভিসের শত চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর স্থানীয় চার যুবকের প্রচেষ্টায় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে উদ্ধার করা হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের নাম শংকর বেপারী বাহাদুর (৩৮)। সে উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গাকাঠি গ্রামের মৃত নিকুঞ্জ বেপারীর ছেলে। তাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সেনা ক্যাম্প সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীর বিদ্যুৎ সংযোগের উভয় পাশে দুটি উঁচু টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। যে টাওয়ারের মধ্য দিয়ে উপজেলার বিদ্যুতের মূল লাইন টানা হয়েছে। সকালে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক টাওয়ার থেকে নেমে পড়ে। সে অজান্তেই টাওয়ারে উঠে যায়। সেই সময় স্থানীয়রা তাকে দেখতে পেয়ে নিচে নেমে আসতে বলে, তাই সে ধীরে ধীরে টাওয়ারের উপরে উঠে যায়। দুপুর নাগাদ উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগ খবর পেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে নেছারাবাদ ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে স্থানীয় কিছু যুবকের প্রচেষ্টায় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকটিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারে অংশগ্রহণকারী যুবকরা হলেন: কাউখালী উপজেলার মো. হাফিজুর রহমানের ছেলে মো. শাহ আলম ওরফে কালু মিয়া, একই উপজেলার মো. ইমাম হোসেনের ছেলে মো. রিপন মিয়া, নেছারাবাদ উপজেলার জগতপট্টি গ্রামের মো. জওয়ান আলী হাওলাদারের ছেলে মো. কালাম হোসেন, কামারকাঠি গ্রামের মো. কুদ্দুস মিয়ার ছেলে মো. রুবেল হোসেন। মানসিকভাবে অস্থির ওই যুবকের মা আলো রানী ব্যাপারী বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। যেহেতু সে মানসিকভাবে অসুস্থ, তাই আমি সবসময় তার উপর নজর রাখতাম। কিন্তু হঠাৎ সকালে যখন তাকে বাড়িতে দেখতে পাইনি, তখন আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করি। পরে নেছারাবাদ থানার পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। এখন আমার ছেলেকে পেয়ে আমি চিন্তামুক্ত। নেছারাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ৫ ঘন্টা পর তাকে ঘটনাস্থলে নামিয়ে আনা হয়। তাকে নেছারাবাদ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নেছারাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বনি আমিন বলেন, ‘মানসিকভাবে অস্থির ওই যুবককে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ নেছারাবাদ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জানে আলম বলেন, আমরা তাকে নামানোর জন্য ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছিলাম। টাওয়ারের মধ্য দিয়ে মূল লাইনটি যাওয়ার কারণে, বিদ্যুৎ লাইনটি কেটে দেওয়ায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি সেখানে আসি। কিছু সাহসী মানুষের প্রচেষ্টায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তাদের সাহসিকতার কারণে একটি জীবন বেঁচে যায়। উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণকারী যুবকদের অফিসে ডেকে পুরস্কৃত করা হয়।