যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিলে কী হবে?
আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন। সেই সময়েই শীর্ষ রিপাবলিকান নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে যদি তারা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পারেন, তাহলে তারা ইউক্রেনের সাহায্য বন্ধ করে দেবেন।
যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতিকে একটি বড় সঙ্কটে নিমজ্জিত করেছে – এটি মার্কিন ভূমিকা ঘটনার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে – এমন একটি দৃশ্য দেখানো হয়েছে যা রাশিয়ার সাথে দেশটির যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এটি মার্কিন তৈরি হিমার্স রকেটের উৎক্ষেপণ দেখায়।
রকেটটি উপরের দিকে উঠে আগুনের লেজ তৈরি করে। তারপর যখন এটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে – একটি বিশাল অগ্নিগোলক তৈরি হয়, যা রাতের আকাশকে আলোকিত করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মোট ১৮টি হিমার্স রকেট দিয়েছে – যার পুরো নাম হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম।
এটি আমেরিকানরা ইউক্রেনকে যে ৫,২০০ কোটি ডলারে সামরিক সহায়তা দিয়েছে তারই একটি অংশ। এটি অন্য সব দেশ মিলে ইউক্রেনকে দেওয়া সাহায্যের দ্বিগুণেরও বেশি।
সাবেক ইউএস মেরিন কর্নেল এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মার্ক ক্যানসিয়ান বলেছেন, ইউক্রেনের সরকার এবং সামরিক বিশেষজ্ঞরা উভয়েই বলেছেন যে সাহায্য তাদের মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি না থাকলে, ইউক্রেনীয়রা সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হত।
কিন্তু শিগগিরই এই সামরিক সাহায্য আবার পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে।
কারণ কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, আমেরিকানরা যখন জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে- তখন এই সাহায্য দেওয়ার যৌক্তিকতা কী?
অক্টোবরের প্রথম দিকে, মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের রিপাবলিকান সংখ্যালঘু নেতা কেভিন ম্যাকার্থি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে কংগ্রেসে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ইউক্রেনকে ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দিতে কম ঝুঁকবেন।
মে মাসে, মিসৌরি রাজ্যের সিনেটর জোশ হাওলি বলেন ইউক্রেনে সহায়তা আমেরিকার স্বার্থে নয় এবং ইউরোপের জন্য তার উদারতার সুবিধা নেওয়ার পথ প্রশস্ত করবে।
স্পষ্টতই, এই মন্তব্যগুলি রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে বিভক্তির ইঙ্গিত দেয়। কারণ এই রিপাবলিকান পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অতীতে তার নিজের দলের যারা ‘ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে সাফাই গায়’ তাদের কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন, তাদের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বাকি বিশ্বও থেকে বিচ্ছিন্ন।
পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান টোবিয়াস এলউড এমপি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করলে পুতিন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারেন।
কিন্তু ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এবং মার্কিন পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাই ঘটুক না কেন, অন্তত স্বল্প মেয়াদে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সহায়তা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
গত মাসে একটি জরিপে দেখা গেছে যে ২০ শতাংশ আমেরিকান মনে করে ইউক্রেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব বেশি সহায়তা দিচ্ছে। পিউ রিসার্চ অনুসারে, উত্তরদাতাদের ১২ শতাংশ গত মে মাসে এবং মার্চ মাসে মাত্র ৭ শতাংশ এই মত পোষণ করেন।
তবে বিপুল সংখ্যক আমেরিকান এখনও ইউক্রেনকে সাহায্য দেওয়ার পক্ষে। চলতি মাসের শুরুতে তা ছিল ৭৩ শতাংশ।