যাত্রী কম বাসও কম।ঢাকায় প্রবেশের জবাবদিহিতা, মোবাইল ফোনে তল্লাশি
শুক্রবারও রাজধানীর বিভিন্ন মহাসড়কে পুলিশ তল্লাশি চৌকি বসিয়ে গাড়ি তল্লাশি ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঢাকায় যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হলো। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা জানতে যাত্রীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে পুলিশ। বিএনপির সমাবেশে যোগ দেবেন কিনা সন্দেহ থাকলে তাকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগও বিভিন্ন মহাসড়কে পাহারা বসিয়েছে।
এসব কারণে শনিবার বিএনপির সমাবেশের আগের দিন আতঙ্কে যাত্রী সংখ্যা কম ছিল। বাস কম চলছে। যাত্রী সংকটের কারণে অনেক দূরপাল্লার বাস যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার বার্তা দিতে সরকার সমর্থক পরিবহন মালিক সমিতি শতাধিক বাস সড়কে চলাচলের নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। গতকাল রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে হাতে গোনা কয়েকটি বাস ছিল। যাত্রী সংকটের কারণে ঢাকামুখী চারটি লঞ্চ বাতিল করা হয়েছে। কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী ট্রেনে যাত্রী কম।
গতকাল দুপুর ও বিকেলে রাজধানীর গাবতলী, টেকনিক্যাল, আসাদগেট, ফার্মগেট, শাহবাগ, মৎস্যভবন, কাকরাইল, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মগবাজার, তেজগাঁও এলাকায় সড়কে বাস চলাচল করে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, যাত্রী কম থাকায় সব বাস চলাচল করেনি। বিএনপি অগ্নিসংযোগ শুরু করতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেক বাস নামায়নি।
মিরপুরের এক মালিক বলেন, তার বাস ই-টিকেটিংয়ে চলে। সারাদিনে আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়। এমনকি গতকাল চার হাজার টাকা মূল্যের টিকিটও বিক্রি হয়নি। তেলের দাম বাড়ছে না। তাই ছয়টির মধ্যে চারটি বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, যেসব বাস চলছে, সেগুলোর অর্ধেকও আসন দখল নেই। পথে পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের পাহারায় হয়রানির ভয়ে সাধারণ যাত্রীরা আসেন না।
আগের দিনের মতো গাবতলী, কাঁচপুর, পোস্তগোলা, টঙ্গীসহ রাজধানীর প্রবেশমুখে ছিল পুলিশি চেকপোস্ট। গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার পোশাক কর্মকর্তা নাহিদুর রহমান খান জানান, অটোরিকশায় করে কামারপুর ব্রিজ হয়ে ঢাকায় ফেরার পথে পুলিশ তাকে তল্লাশি করে। পুলিশ মোবাইল ফোন দিয়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফটো গ্যালারি চেক করে। এছাড়াও ব্যক্তিগত ছবিও দেখে।
বিএনপি বলছে, ঢাকায় নেতাকর্মীদের জনসমাবেশে যেতে বাধা দিতেই এসব তল্লাশি। সাভার থেকে সংবাদদাতা জানান, আমিনবাজার ও আশুলিয়ায় পুলিশের তল্লাশি আগের দিনের চেয়ে জোরদার হয়েছে। আমিনবাজারে হাসপাতালের সামনে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা যায়, ঢাকাগামী সব বাসে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখা যহয়। বিএনপির সমাবেশে যাচ্ছেন- সন্দেহ হলে ঢাকায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না এবং বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালানো হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকলে মামলা করা হচ্ছে।
আন্দোলনের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। পুলিশ কাউকে ঢাকায় যেতে বাধা দিতে পারবে কি না জানতে চাইলে সাভার চামড়া শিল্প সিটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রাসেল মোল্লা বলেন, নিরাপত্তার কারণে তল্লাশি চালানো হলেও কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁ প্রতিনিধি জানান, হানিফ পরিবহনের চালক আবুল হোসেন জানান, শুক্রবার ভোরে তিনি চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করেন। পথে আটটি স্থানে অন্তত ১০ মিনিট করে তল্লাশি চালানো হয়। এতে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
বাসের যাত্রী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, পুলিশ বারবার চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলছে।
মৌচাক ছাড়াও সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর সেতুর ঢালে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। তল্লাশি চালানো হয় মোটরসাইকেলও। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, নাশকতা ঠেকাতে এ তল্লাশি। বিস্ফোরক পরিবহন করা হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে গাড়িতে। পুলিশ কাউকে আটক করেনি।