• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    মেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস।প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত সাত চিকিৎসককে গ্রেপ্তার

    ২০২০ সালে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসআই প্রশান্ত কুমার শিকদার বাদী হয়ে মিরপুর থানায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা করেন। তিন বছর পর শনিবার রাতে হঠাৎ করে সিআইডি ঘোষণা করে সাত চিকিৎসকসহ মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

    অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, প্রশ্ন ফাঁসের চক্রে রয়েছেন মেডিকো কোচিং সেন্টারের নেতা ডা. জোবায়দুর রহমান জনি। তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া গ্রেফতার আখতারুজ্জামান তুষার ই-হক কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত। এই দুজন ২০০৫ সাল থেকে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত।

    সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, সংবাদ সম্মেলনে সাত চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ছিলেন মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতা। গ্রেফতারকৃত চিকিৎসকরা জসিম সিন্ডিকেটের সদস্য। এ ছাড়া প্রশ্নফাঁস মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া আরও বেশ কয়েকজন আসামি জবানবন্দিতে জড়িত অনেকের নাম প্রকাশ করেছে। কিন্তু ঘটনার পর অনেকেই ধামাচাপা দেন। দীর্ঘদিন ধরেই গোয়েন্দারা নজর রাখছিলেন এই চক্রের ওপর। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সাত চিকিৎসকের সরাসরি সম্পৃক্ততা দেখে বিস্মিত তদন্তকারীরাও। গ্রেপ্তার হওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে অন্তত দুজন সরকারি হাসপাতালের। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে কর্মকর্তারা তাদের বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

    একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও পরীক্ষা করা হয়েছে। কয়েক জনের অ্যাকাউন্ট নম্বরে লাখ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। তারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছে বলেও তথ্য রয়েছে। আরেকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত কয়েকজন চিকিৎসক বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত।

    কোচিং সেন্টারের আড়ালে তারা নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীদের কাছে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিত। বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত তারা। চিকিৎসক ছাড়াও যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবী রয়েছেন। কয়েকজন চিকিৎসকের বাড়ি ঢাকায়।

    প্রশ্নফাঁস মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সালে মিরপুর থেকে সানোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন জসিম, পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু ও মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন। গ্রেপ্তার জসিমের চাচাতো ভাই আব্দুস সালাম স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেসে মেশিনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মূলত জসিম সালামের মাধ্যমেই প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করতেন। এরপর তিনি সিন্ডিকেটের বিভিন্ন সদস্যের কাছে পাঠান। গ্রেপ্তার হওয়া সাত চিকিৎসক জসিমের অত্যন্ত অনুগত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশ্ন ফাঁস করে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা আয় করেছেন জসিম। ঢাকায় তার দুটি বাড়ি, একাধিক গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

    জানা গেছে, মেডিকো কোচিং সেন্টারের মালিক ডা. জনি দেশের বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলে প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিলেন। প্রশ্ন-বিক্রয় সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে তিনি জসিমের আস্থাভাজন হন। জসিম ২০২০ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন। তার ৩৮টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে রয়েছে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তার স্ত্রী শারমিন আরা জেসমিনের ১৪টি অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা রয়েছে। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সিন্ডিকেট সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তদন্তে জসিম ও তার সহযোগী সালামের পরিবারের একাধিক সদস্য ও চিকিৎসক এবং চারটি কোচিং সেন্টারের সম্পৃক্ততার কথাও বেরিয়ে আসে। জসিমের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্তব ইউনিয়নে। তাদের একটি দরিদ্র পরিবার ছিল। তিনি তার চাচাতো ভাই সালামের সাথে তিন দশক ধরে সংবাদমাধ্যমে ভ্রমণ করেছেন। এক পর্যায়ে দুজনে মিলে একটি বৃত্ত তৈরি করে। এতে যোগ হচ্ছে চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

    সিআইডি দাবি করছে, সালাম এই চক্রের সদস্য হয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁস শুরু করেন। ছাপা হওয়ার সময় প্রেস থেকে প্রশ্ন এড়িয়ে যেতেন। এরপর চাচাতো ভাই বীমা কর্মী জসিমের কাছে প্রশ্ন তুলে দিতেন। সারা দেশে ছড়িয়ে দিতেন জসিম। বিনিময়ে তারা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা নিত। সার্কেলকে ঘিরে ডাক্তার, মেডিকেলের ছাত্রসহ আরও অনেককে নিয়ে গড়ে ওঠে একটি বড় সিন্ডিকেট। সিআইডি জানায়, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করে। মামলার তদন্তকালে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।