জাতীয়

মেট্রোরেল এমআরটি পাসের জন্য লম্বা সারি

ঘড়িতে তখন ২টা ৪৪ মিনিট। গেট খুলবে বিকেল ৩টায়। এমআরটি পাসের জন্য রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে সিঁড়ির সামনে শত শত মানুষ ফুটপাথে লাইন ধরে। তারা দুই ঘণ্টা আগে লাইনে দাঁড়িয়েছিল। আপনি এমআরটি পাস কিনলে, টিকিট কেনার জন্য আপনাকে প্রতিদিন লাইনে দাঁড়াতে হবে না। মেশিনে স্পর্শ করে কার্ডটি প্লাটফর্মে প্রবেশ করানো যেতে পারে। কার্ডের টাকা শেষ হয়ে গেলেই রিচার্জ করেই মেট্রোতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। কার্ডের মেয়াদ হবে ১০ বছর। ১০ শতাংশ ছাড়ও পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিদিন সকালে মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি। এছাড়াও টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরেছেন শত শত মানুষ। টিকিটের পর এখন দেখা যাচ্ছে এমআরটি পাস পেতে মানুষের সারি। গতকাল রোববার বছরের প্রথম দিন রাজধানীর আগারগাঁও ও উত্তরা দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল স্টেশনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন টিকিট কেনার ঝামেলা এড়াতে উদ্বোধনের পর থেকেই এমআরটি পাস চালু করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এই পাসটি ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এমআরটি পাস নিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ৬০ টাকার পরিবর্তে ৫৪ টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। পাসটি হস্তান্তরযোগ্য হলেও একই পাস ব্যবহার করে দুইজন যাত্রী একসঙ্গে মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন না। এসব না জানার কারণে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ছাড়া দিনের টিকিট বিক্রি হওয়ায় আগের দিনের টিকিট কাটানোর সুযোগ নেই। এ নিয়ে যাত্রীদেরও অভিযোগ রয়েছে।
নিউ ইস্কাটনের বাসিন্দা অনিক উত্তরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এমআরটি পাস কেনার সময় তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, কার্ডের দাম রাখা হয়েছে ২০০ টাকা। বাকি ৩০০ টাকা রিচার্জে। সেই ৩০০ টাকা দিয়ে তিনি তিন দিনও যাতায়াত করতে পারবেন না। তাই তিনি একবারে ২০০০ টাকা রিচার্জ করতে চেয়েছিলেন। এমআরটি পাস বিক্রেতা তা দেননি। তাই তিন দিন পর তাকে আবার লাইনে দাঁড়াতে হবে টাকা রিচার্জ করতে। তার প্রশ্ন, কম টাকা রিচার্জের এমন ব্যবস্থা থাকবে কেন?
এমআরটি পাস কিনতে যাওয়া নগরবাসীর অভিযোগ, একটি পাস একই পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে ব্যবহার করবেন- সে সুযোগ রাখা হয়নি। কর্তৃপক্ষ এক ব্যক্তির কাছে তিনটি পাস বিক্রি করছে না। যদি একটি পরিবারের চার সদস্য একসঙ্গে ভ্রমণ করতে চান, তাহলে টিকেটের জন্য একই কাতারে দাঁড়াতে হবে আরেকজনকে। মেট্রোরেলকে এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাহলে মানুষ অনেক দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে।
বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র ফিরোজ জানান, মেট্রোরেলে চড়ে ঢাকায় আসেন। তিনি একদিন চড়লেন। তিনি একটি এমআরটি পাস কিনবেন কারণ তিনি মাঝে মাঝেই রাইড করবেন। তা কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে তাকে। স্টেশনে পৌঁছানো থেকে পাস কিনতে এবং বের হতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগেছিল। কারণ সেখানে শত শত মানুষ। আর পাস বিক্রি করছেন মাত্র দুজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, এমআরটি পাস কিনতে গিয়ে তিনিও কষ্ট পেয়েছেন। চার দিক থেকে স্টেশনে প্রবেশের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু মাত্র একটি গেট খোলা। ফলে ওই গেটে পৌঁছতে তাকে অনেক ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে। এদিকে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর রোকেয়া সরণি সড়কে যানজট অনেক বেড়েছে। রাস্তা পার হওয়ার সুযোগ নেই। আবার বলা হয়, মেট্রোরেল স্টেশন ফুট ওভারব্রিজ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও ফুট ওভারব্রিজ হিসেবে কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না।
গেটের নিরাপত্তারক্ষী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি মেট্রোরেল প্রকল্পে কাজ করছেন। তবে এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। যাত্রীরা জোর করে ভেতরে ঢুকতে চায়। দুপুরের পর থেকে এমআরটি পাস লাইনে ভিড় শুরু হয়।
মেট্রোরেলের এমআরটি পাস বিক্রির অপারেটর শেখ ইমরান বলেন, ‘আমরা সমস্যাগুলো বুঝি। মানুষের চাহিদাও বুঝি।’ এ বিষয়ে তিনি স্টেশন ইনচার্জ সামিউল কাদিরের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
সামিউল কাদির বলেন, মেট্রোরেল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেওয়ার জন্য তাদের একজন জনসংযোগ কর্মকর্তা রয়েছেন। শুধু তিনিই বিস্তারিত বলতে পারবেন।
মেট্রোরেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা নাজমুল ভূঁইয়া বলেন, ‘ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

মন্তব্য করুন