• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    মেটাতে পারবে না তাই আবদারও করি না।জীবন যুদ্ধে ঈদ বিলীন হয়ে যায়

    উজানে স্রোত না থাকায় যমুনা এখন শান্ত। যে কারণে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়িতে নদীর তীরে বসতবাড়ি ভেঙে বাড়ি নির্মাণের লড়াইও থেমে গেছে। তবে যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া হতদরিদ্র মানুষের জীবন সংগ্রাম থেমে নেই। প্রতিদিন তিনবেলা খাবার জোগাতে তাদের লড়াই করতে হয়। এ কারণে ঈদ নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি পরিচালিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তা ছাড়া দানশীল ব্যক্তিরা ঈদের আগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও করোনার পর আর দেখা যায় না। যে কারণে ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শাহরাবাড়ী থেকে মাধবডাঙ্গা পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে বসবাসকারী শত শত পরিবারে ঈদ নিয়ে নেই কোনো উচ্ছ্বাস বা আনন্দ। বিপরীতে, অনেক পরিবার ঈদের শুভেচ্ছা জানায় কারণ এটি ‘বর্ষের দিন’ (বছরের একটি উৎসবের দিন) হিসাবে পরিচিত এবং ছোট বাচ্চাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন পোশাক সরবরাহ করতে অক্ষম।

    ধুনটের ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া রুবেল মিয়ার স্ত্রী বলেন,  ঠাকুর কিছুই দিতে পারেননি। এটা আমাদের জন্য কতটা কষ্টের তা বোঝা যাচ্ছে না। ‘

    কুলসুম বেগম জানান, তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে রাত্রি খাতুন স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সুমাইয়া ও সাথী নামে আরও দুই মেয়ে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ছে। সবার ছোট তাহসিন বাবুর বয়স মাত্র ১০ মাস। কুলসুম বেগম জানান, তার স্বামী রুবেল মিয়া পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তবে ওই কাজ থেকে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে তাকে না খেয়েই চলতে হয় ৪ সন্তান নিয়ে। তিনি অভিযোগ করেন, এলাকার কিছু মানুষ সরকারি ভিজিএফ ও ভিজিডি থেকে খাদ্য সহায়তা পেলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি।

    শিমুলবাড়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ইউসুফ আলীর স্ত্রী রমেলা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তার দুই ছেলে অন্তর ও অমিত বেশ কয়েকদিন ধরে ঈদের কাপড়ের টাকা জমা করে রেখেছিলেন। কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারিনি। এতে অভিমান করে দুই ভাই নানার বাড়িতে কাপড় নিয়ে যায়। পঁচাত্তর বছর বয়সী আবদুর রাজ্জাক বলেন, করোনার আগে অনেক দানশীল ব্যক্তি ঈদ এলাকায় আসতেন। তারা শিশুদের হাতে নগদ টাকা ও শাড়ি-লুঙ্গি ও বিভিন্ন রঙের জামাকাপড় দেন। কিন্তু করোনা আসার পর কেউ আসে না। তিনি বলেন, ‘যারা শুচিকে সাহায্য করতেন তারা করোনার কারণে ব্যবসা হারিয়েছে। তাই তারা আসছে না। রাসেল মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তিনি অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, ‘যখন কাজ থাকে তখন খাবার অতটা কঠিন হয় না। কিন্তু জমিতে কাজ না থাকলে দুই সন্তানসহ পরিবারের ৪ সদস্যের খাবার জোগাতে কষ্ট হয়। এখন পর্যন্ত ঈদের সেমাই কিনতে পারিনি। কেউ দিলে হয়তো খেতে পারব। ‘

    মন্তব্য করুন