মুরাদকে দল থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে, সংসদ সদস্য পদও হারাচ্ছেন!
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে দল থেকে বহিষ্কৃত হতে যাচ্ছেন ড. মুরাদ হাসান। মঙ্গলবার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া দল থেকে বহিষ্কারের ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। বহিষ্কৃত হলে সংগঠনে তার কোনো প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে না। সংসদ সদস্যপদও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তবে সে ক্ষেত্রে স্পিকারকে সংবিধানের নির্দেশনা মেনে নির্বাচন কমিশনের মতামত নিতে হবে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী বৈঠকে মুরাদ হাসানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে মুরাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ।
এদিকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
গত মাসে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের ক্ষেত্রেও তাই হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে, মুরাদের ক্ষেত্রেও তাই হবে ড. তবে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ছাড়া এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।
ওবায়দুল কাদের এই বক্তব্য দেওয়ার পরপরই জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে মুরাদ হাসান পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। নৈতিক স্খলনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে এমপি পদ হারাতে হবে। মুরাদ হাসান দোষী সাব্যস্ত না হলেও একজন অভিনেত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে ফোন করা হয়েছে। তাই তিনি এমপি পদে থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, গুরুতর অভিযোগ থাকলে এ বিষয়ে স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন।
মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বেশ দীর্ঘ। খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানের বিরুদ্ধে অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য, রাষ্ট্রীয় সংস্থা ব্যবহার করে নায়িকাকে হোটেলে নিয়ে আসা, ধর্ষণের হুমকি এবং অশ্লীল মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে। ঠিক কী কারণে তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান কঠোর। অপরাধী যেই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে নয়। শেখ হাসিনা তা প্রমাণ করেছেন।
তাকে বহিষ্কার করা হলে এমপির পদ শূন্য হবে?: সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দল থেকে পদত্যাগ করলে এমপির পদ শূন্য হবে বলে স্পষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে এমপি পদ শূন্য হবে বলে সরাসরি কোথাও উল্লেখ নেই। তবে অতীতের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের অনেকেই দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও এমপি পদে বহাল রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে নবম সংসদ গঠনের পর এমন কোনো নজির নেই। কারণ, ওই ভোটের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বাধ্যতামূলক করতে জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) সংশোধন করা হয়েছে। তাই এখন দল থেকে অন্য কাউকে বহিষ্কার করা হলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বাধীন হতে পারবে না। কারণ, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসহ আরও অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়।
এই বিধানের অধীনে নির্বাচন কমিশনের আরপিও ১২ (বি) অনুযায়ী সংসদ সদস্যপদ বাতিল করার সুযোগ রয়েছে। কারণ ওই ধারায় বলা হয়েছে- এমপি হওয়ার যোগ্য হতে হলে তাকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে।
তাই দল থেকে বহিষ্কারের পর দলের সিদ্ধান্ত চিঠির মাধ্যমে স্পিকারের কার্যালয়কে জানাতে হবে। স্পিকার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে সুপারিশের জন্য পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত আবার স্পিকারের কাছে এলে তিনি তা সংসদের অধিবেশনে জানাবেন।