মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড: চাকরিতে যোগদানের তিন দিন পর স্কুলছাত্রী মুনা আগুনে পুড়ে মারা যায়
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মুনা আক্তার (১৫) ঢাকা যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে মিরপুরের রূপনগরে অবস্থিত শিয়ালবাড়ি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। কিন্তু চাকরিতে যোগদানের তিন দিন পর কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যায়। তিনি যেমন শান্ত ছিলেন, তেমনি পড়াশোনায়ও ভালো ছিলেন।
গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) ভোরে মুনার মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি, নেত্রকোনার মদন উপজেলার কদমশ্রী গ্রামে আনা হয়। পরে, তার গ্রামে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
জানা গেছে যে মুনা আক্তার ওই গ্রামের সোনু মিয়া এবং মিনা আক্তার দম্পতির একমাত্র মেয়ে। মুনা চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিল।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের সাথে গর্বের বশে সে কয়েকদিন আগে ঢাকায় চলে আসে। সেখানে তার পরিচিত এক যুবকের মাধ্যমে সে শিয়ালবাড়ি পোশাক কারখানায় চাকরি পায়। কিন্তু কারখানার রাসায়নিক গুদামে আগুন লেগে সে দগ্ধ হয়ে মারা যায়।
তার চাচাতো ভাই আব্দুল বারী আকন্দ হীরা বলেন, মুনা খুবই শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। আমি তাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারি যে মিরপুরে আগুনে পুড়ে সেও মারা গেছে। গত রবিবার রাতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে মরদেহ আনা হয়।
এদিকে, মিরপুরের ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মরদেহ গত রাতে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। মুনা আক্তারসহ চারজনের বাড়ি নেত্রকোণায়।
অন্য তিনজন হলেন বারহাট্টা উপজেলার নুরুল্লারাচর গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে জয় মিয়া (২১), মোহনগঞ্জ উপজেলার জয়পুর গ্রামের জজ মিয়ার ছেলে তোফায়েল আহমেদ (১৮) এবং একই উপজেলার সাউথখালী গ্রামের নয়ন মিয়ার মেয়ে আসমা আক্তার (১৪)। এছাড়াও, নিহত জয় মিয়ার স্ত্রী মার্জিয়া সুলতানার (১৮) মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
মারজিয়ার বাবা সুলতান মিয়া বলেন, “আমার একটাই মেয়ে। চার মাস আগে আমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের পর সে খুশি ছিল। আমি দাহা (ঢাকা) যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম না। এই দাহা শহরে কয়েকদিন পর পর দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যায়। কিন্তু আমার মেয়ে আমাকে বোঝায় যে চিন্তা করো না। তারা নিরাপদ থাকবে। আমি কারখানার কাছে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম। আমার অহংকার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার জামাইয়ের লাশ পেলেও, আমার মেয়ের অহংকারও খুঁজে পাচ্ছি না।”
এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান আমাদেরকে বলেন, মিরপুর কারখানায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে নেত্রকোনার চারজনের মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।

