• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    মামলা দিয়েও রেলের দুর্নীতি ঠেকানো যাচ্ছে না

    রেলওয়েতে যখনই নিয়োগ হয় তখনই দুর্নীতি একটি অব্যক্ত নিয়মে পরিণত হয়েছে। জিএম ইউসুফ আলী মৃধাসহ তিন শীর্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন। দুদকের মামলায় তাকে জেলও খাটতে হয়েছে। জিএম মৃধাসহ তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নিয়োগ দিতে গিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে।

    জিএম ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার পরও নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ায় যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২৮ আগস্ট, পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ ফারুক আহমেদ, আরএনবি পূর্বাঞ্চলের প্রধান কমান্ড্যান্ট মো. জহিরুল ইসলামসহ পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

    দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মোঃ নাজমুছাদাত বলেন, রেলওয়ে নিয়োগে দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে। এই দুর্নীতি সহজে বন্ধ হচ্ছে না। দুদক কড়া নজরদারি রেখেছে।

    সিটিজেনস ফর গুড গভর্নেন্স (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, রেলওয়ে এখন চরম ভাবমূর্তি সংকটে রয়েছে। অবৈধ নিয়োগ দিয়ে কোটিপতি হচ্ছে সংগঠিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। অযোগ্য ও অদক্ষ নিয়োগের কারণে রেলওয়ে দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

    দুদকের পিপি মাহমুদুল হক বলেন, রেলওয়ের ১৩টি নিয়োগ দুর্নীতির মামলা পরিচালনার সময় মামলার নথি ও তথ্য-প্রমাণ দেখে মনে হচ্ছে রেলওয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তাই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। রেলের কর্মকর্তারা রেলে নিয়োগকে অর্থ উপার্জনের যন্ত্র বলে মনে করেন। আদালতে মৃধাসহ তিন কর্মকর্তার সাজা হওয়ার পরও রেলের কর্মকর্তারা শিক্ষা নেননি।

    জিএমসহ পাঁচ কর্মকর্তার ফাঁসি: রেলওয়ে সিকিউরিটি ফোর্স (আরএনবি) কনস্টেবল নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাসের কাছাকাছি, পোষ্য কোটার প্রার্থীরা। তাদের মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের অযোগ্য করা হয়। যোগ্য প্রার্থীদের যোগ্য প্রার্থী করা হয়। কোটার জন্য অযোগ্য প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। দুদক অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে যে, বিভাগীয় কোটা, জেলা কোটা ও এই দুটির মতো অন্যান্য কোটার নিয়ম না মেনে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়। ২৮ আগস্ট, পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম), সৈয়দ ফারুক আহমেদ, বর্তমানে আরএনবির পূর্বাঞ্চলের প্রধান কমান্ড্যান্ট। জহিরুল ইসলাম, বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলাম, বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফুয়াদ হাসান পরাগ ও পূর্বাঞ্চলের সাবেক এসপিও মো. সিরাজ উল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে। ২০১৭ সালে, ১৮৫টি কনস্টেবল পদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল।

    খালাসী পদে দুর্নীতি: খালাসী পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল ৩১ মার্চ ২০১৯। কিন্তু দুদক তদন্ত করে দেখতে পায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মার্কশিটে সুবিধাজনকভাবে মার্কশিটে মার্কশিটে যোগ করা হয়েছে, এম এ জিন্নাহ, যিনি, এর সদস্য। নিয়োগ কমিটির অন্য সদস্য খলিলুর রহমানের স্বাক্ষর ছাড়াই। একই পরিবারের দুই ভাইয়ের বয়সে ৫ দিনের ব্যবধান থাকলেও দুজনেই চাকরি পান এবং জাল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে ১৯ জনকে চাকরি দেওয়া হয়। জিএম ড্রাইভার হারাধন দত্ত তার আত্মীয়ের বৃদ্ধা স্ত্রীকে জাল শংসাপত্রে চাকরি দেন। নিয়োগের নিয়ম না মেনে একজনের জন্য দুটি চাকরি, একটি পরিবারের জন্য দুটি চাকরি, একটি স্কুল থেকে একাধিক চাকরি দেওয়া হয়। ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া সুলতানা জালিয়াতির মাধ্যমে ১২ জনকে অষ্টম শ্রেণির সনদ দিয়েছেন। রেলওয়ের ঠিকাদার ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিরুজ্জামান এসএ পরিবহনের মাধ্যমে ১৩ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। ঢাকার নাখালপাড়ার পারভীন আক্তার ৯ জনকে চাকরি দেওয়ার নামে ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা নেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা ১ কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ দায়ের করা এ মামলায় রেলওয়ের জিএম ফারুক আহমেদ, রেলভবনে কর্মরত মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) মিজানুর রহমান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক জোবেদা আক্তার, টিএসও রফিকুল ইসলাম, এমএলএমএস হারাধন দত্তসহ চাকরি পাওয়া ১২ জনকে আসামি করা হয়।

    আরও ঘটনা: ডিসেম্বর ৩০.২০১৬  রেলওয়ে ট্রেড শিক্ষানবিশ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় পরীক্ষা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। এখানে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার সংখ্যাতাত্ত্বিক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হলেও ওই প্রশ্নেই পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষাটি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭-এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০ জুলাই, ২০১৮ তারিখে, রেলওয়ে টিকিট কালেক্টর গ্রেড-২-এর পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা -এর কারণে স্থগিত করা হয়েছিল।

    মন্তব্য করুন