• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    মামলা আতঙ্ক পরিবহন খাতে।প্রতিদিন ২৬৭১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা * ৮০ শতাংশই দুর্ঘটনা জাতীয় সড়কে ঘটে।

    কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পর তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। রিপন। তিনি সম্প্রতি তার মোটরসাইকেলে অফিসে যাচ্ছিলেন যখন ফার্মগেট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামার ইঙ্গিত দেয়। এর পরে, পুলিশ তার মোটরসাইকেলের নথিপত্র যাচাই করে তাতে কোন ত্রুটি খুঁজে পায়নি। যাইহোক, রিপন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন নিয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। এই কারণে, তাকে জানানো হয়েছিল যে মোটরসাইকেল ডাম্পিংয়ের খরচ সহ তাকে মোট ২,০০০ টাকা দিতে হবে।

    এইভাবে, অনেক চালককে অকারণে রাস্তায় মামলা এবং ডাম্পিংয়ের ভয়ের সম্মুখীন হতে হয়। নতুন আইনের অধীনে, রাস্তায় রাস্তায় ভারী জরিমানার ক্ষেত্রে ‘স্লো ডাউন’ নীতি দেখা গিযয়েছে, কিন্তু এখন মামলা ব্যাপক হারে হচ্ছে।

    সোমবার রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে শওকত আলী তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মোটরসাইকেলটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এর পরে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে রাস্তা এবং মহাসড়কে অপরাধ বিবেচনা করে মামলার ধরন এবং যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

    নতুন সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে, জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি এবং ক্ষুদ্র অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হলে অনেক মানুষ চাপের মধ্যে থাকে। যারা ছোট চাকরি বা আয় করেন, তাদের মাসে দুই থেকে চারটি মামলা খেলে আর্থিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। যেহেতু নতুন আইনে জরিমানা বেশি, তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কয়েকবার আইন ভাঙার সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

    পুলিশ সদর দফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসে সারা দেশে মোট৮০,১৩৭ টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২,৬৭১ টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন খাতে ৮৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯১ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

    সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্পর্কে জানতে চাইলে। এম শামসুল হক বলেন, যে কোনো সমস্যা সামনে আসার পর আমাদের তার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। শুরুতেই সমস্যার সমাধান হয় না। অনেকেই যথাযথ আইন অনুসরণ না করে যানবাহনে রাস্তায় নেমেছেন। আমরা তাদের সেই সুযোগ দিয়েছি। এখন যদি তারা একটু কঠোর হয়, তাদের মানুষের সমস্যা হবে। আবার, আইন প্রয়োগে পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। আইন প্রয়োগকারী চূড়ান্ত বিচারে সাফল্য নয়, সচেতন হওয়া জরুরি। এটাও সত্য যে করোনার সময়কালে অনেকের দেওয়ালে পিঠ থাকে।

    এম শামসুল হক আরও বলেন, পরিবহন খাতে সমন্বয় থাকা দরকার। আমাদের এখানে নেই। রাস্তায় না থাকলেও বিআরটিএ দিনের পর দিন গাড়ি ও চালকদের নতুন লাইসেন্স দিচ্ছে। দুর্ঘটনার পর তারা কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। বাসযোগ্য শহরের জন্য যা প্রয়োজন তার অনেকটাই এখানে অনুপস্থিত। শুধু পুলিশ বাহিনী প্রয়োগ করলে রাস্তায় এই আবর্জনা অপসারণ হবে না। এই খাতে আমূল সংস্কার দরকার।

    ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, মূল লক্ষ্য রাস্তায় আইন প্রয়োগ করা যাতে মানুষ সতর্ক থাকে। জরিমানা করার আগে তার আর্থিক বিষয় বিবেচনা করা দরকার। সার্জেন্টদের যুক্তিসঙ্গত কারণে যুক্তিসঙ্গত জরিমানা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। করোনায় জিনিসগুলিকে আরও মানবিকভাবে দেখা হচ্ছে। কোন পুলিশ সদস্যকে জরিমানা এবং মামলা করার জন্য লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় না।

    বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, “দেশের অর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে নতুন আইনে জরিমানার পরিমাণ কমানোর জন্য আমরা ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। । ” যে কোনো ধারায় জরিমানার পরিমাণ দুই হাজার গুণ বেড়েছে। হাইড্রোলিক হর্নের জন্য ১৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। নতুন আইন আরো বিবেচনায় এবং সাবধানতার সাথে বাস্তবায়ন করা উচিত। নইলে অনেকেই রাস্তায় বসে যাচ্ছেন।

    মন্তব্য করুন