মানুষ পুড়িয়ে মারলে, গ্রেনেড দিয়ে হত্যা করলে কাউকে ছাড় দেব না: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকারের কোনো আপত্তি নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং-এ কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু একজনকে যদি পুড়িয়ে মারা হয়, বোমা মেরে ফেলা হয়, গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় বা এমন নির্যাতন করা হয়- তাহলে আমি একজনকেও রেহাই দেব না। এটাই আসল কথা।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, কার সঙ্গে সংলাপ করতে হবে? বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার সঙ্গে? সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা গ্রেনেড ছুড়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের সঙ্গে আবার সংলাপ করতে হবে- এ কী ধরনের কথা!
শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আছে। যারা নির্বাচন করতে চান। আর যাদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তারা হয়তো ভোট দেবেন না। তবে বাংলাদেশের জনগণই নির্বাচন করবে। তারা ভোট দেবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চুরিকারীরা শুধু ভোট চুরি করতে জানে। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট চুরির দায়ে বাংলাদেশের জনগণ খালেদা জিয়াকে টেনে নিয়েছিল। ৩০ মার্চ গণআন্দোলনে তিনি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। আর ভোট চুরি করলে এদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না।
বিএনপির সাম্প্রতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মিটিং করছে, আমরা বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু আন্দোলনের নামে তারা যে নৃশংসতা করেছে তা আমরা ভুলব কী করে? সাধারণ মানুষ কি করে ভুলতে পারে? তাদের অগ্নিসংযোগের কথা, এটা কি কোনো মানুষের কাজ? জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা, এটাই বিএনপির আন্দোলন!
সহনশীলতাকে দুর্বলতা না ভাবতে বিএনপিকে সতর্ক করে তিনি বলেন, বিএনপির আমলে আমাদের ওপর যে আঘাত দেয়া হয়েছিল তা আমরা ভুলিনি। তবে আমরা যেন সহিষ্ণুতাকে আমাদের দুর্বলতা না ভাবি, দুর্বলতা নয় বাংলাদেশের জনগণ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে, তারা আমাদের সঙ্গে, খুনিদের সঙ্গে নয়।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের তাগাদা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলেছেন সংলাপ, আলোচনা হতে হবে। দুর্নীতিবাজ-সাজাপ্রাপ্ত এতিম অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ ও অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড লাঞ্চার, আইভি রহমানের খুনি। আর জিয়াউর রহমান আমার বাবার খুনি। আর তাদের সঙ্গে সংলাপ! আলোচনা করতে হবে! তিনি মানবাধিকারের কথাও বলেন। এটা কোন ধরনের কথা ।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। সারাদেশের ৭৪টি সাংগঠনিক জেলা থেকে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সম্মেলনের কর্মসূচির নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই দুপুর আড়াইটায় বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হন। লাল-সবুজ শাড়ি ও ক্যাপ পরা বিপুল সংখ্যক নারী ছিল চোখে পড়ার মতো। স্লোগান ও গানের তালে নেচে-গেয়ে অনুষ্ঠানস্থলকে উৎসবমুখর করে রাখে নেতাকর্মীরা। দুপুরের আগেই নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড় সম্মেলনস্থল ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কে ছড়িয়ে পড়ে।
সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। নৌকার আদলে তৈরি বিশাল দর্শনীয় মঞ্চে চলছে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। রঙিন বেলুন, ব্যানার ও ফেস্টুনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি সাজানো হয়েছে পার্কজুড়ে।
বিকেল সাড়ে ৩টায় সম্মেলনস্থলে পৌঁছে জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক। পরে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠলে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।