মানুষের কষ্ট।ভাত আর সবজিতে টাকা শেষ, মাছ-মাংস বিলাসিতা
কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছ, মাংস ও ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এসব পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মধ্যবিত্তরাও হিমশিম খাচ্ছে। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব জিনিস কিনতে গিয়ে খাদ্য তালিকা থেকে মাছ, মাংস ও ডিম বাদ দিয়েছে মানুষ।
বাজারে এমন অস্থিরতার মধ্যে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ায় আরও বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। মাংস কেনা এখন তাদের কাছে বিলাসিতা। মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামের শ্রমিক জাকির হোসেন বলছিলেন, ডিম আর মাছ আর কতদিন খাবেন। গরু, খাসি কবে খেয়েছি, ভুলে গেছি।
সদরের রায়গ্রাম এলাকার রিকশাচালক আমিন উদ্দিন জানান, এখন মানুষ রিকশায় চড়তে চায় না। আয় কমেছে। আয় দিয়ে তিনি ধান ও সবজি কেনেন। আগে তিনি মাঝেমধ্যে সস্তায় মাছ ও ব্রয়লার মুরগি কিনতেন। এখন তা বন্ধ।
মাংস ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন ও ইসহাক মল্লিক জানান, এখন প্রতি কেজি মাংস বিক্রি করছেন এক হাজার টাকায়। এক মাস আগে তা ছিল ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আগে ছিল ৭৫০ টাকা। তা সত্ত্বেও লাভ সামান্যই রয়েছে বলে দাবি তাদের। তিনি বলেন, দাম বাড়ার কারণে বিক্রিও অর্ধেক কমে গেছে।
সারাদেশের মুরগির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও মাগুরা অস্থির। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা, মোরগ ৩৩০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ব্যবসায়ী মামুন দাবি করেন, খামারিদের কাছ থেকে তাকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
তবে ১৫০০ টাকা মূল্যের এক বস্তা মুরগির খাবার এখন সাড়ে ৩ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি খামারিরা। ওষুধের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। যার কারণে উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক বেড়েছে। খামার মালিক এমএইচ রহমান শিবলু জানান, খামার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মালিকরা। জেলার অন্তত ৪০ শতাংশ ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
ডিমের ক্ষেত্রেও তাই। খুচরা পর্যায়ে অনেক দোকানে একটি ডিম বিক্রি হচ্ছে বারো থেকে সাড়ে বারো টাকায়। যদিও কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা লাভবান হতে পারছেন না। ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, কৃষকরা প্রতিটি ডিম দিচ্ছেন ৯ টাকা ৬০ পয়সায়। তারা বিশ পয়সা লাভ নিয়ে দোকানদারকে ছেড়ে দেয়। এতে লাভবান হচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ডিম ও মুরগির বাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
মাগুরা গণসংহতি কমিটির আহ্বায়ক এটিএম মহব্বত আলী বলেন, সবকিছুর দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। আগে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ, ডিম ও ব্রয়লারের মাংস সংগ্রহ করা হতো। এখন খাদ্য তালিকা থেকে ডিম ও মাংসও হারিয়ে যাচ্ছে।
মাছের বাজার থেকে জানা যায়, মাছের দাম আগের মতোই চড়া। তবে সম্প্রতি তা বাড়েনি। কম দামের তেলাপিয়া এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, পাঙ্গাশ, সিলভার কার্প ২৫০ টাকা, রুই, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। ছোট ও মাঝারি ইলিশ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজি। কিন্তু দেশি মাছ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। ব্যবসায়ী অশিত কুমার জানান, দাম বাড়ায় মাছ বিক্রি কমে গেছে।
জেলা খাদ্য ও বিপণন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, ডিম, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে। তবে বাজার মনিটরিং করছে জেলা খাদ্য ও বিপণন বিভাগ। রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের কম মুনাফা করতে বলা হয়েছে।