জাতীয়

মাঠে চাঙ্গা  বিএনপি,, সামনে ১০ চ্যালেঞ্জ

বিএনপি কি চলমান আন্দোলনে সফল হয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ নির্বাচন দাবি করতে পারবে? সরকারকে বাধ্য করার জন্য কি অপ্রতিরোধ্য গণসংগ্রাম হবে? নাকি আওয়ামী লীগকে রেখেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতে বাধ্য হবে? এ নিয়ে সর্বত্র চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

যদিও বিএনপি নেতারা এরই মধ্যে তাদের কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন যে, তারা নির্বাচনে যাবেন না এবং নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হতে দেবেন না। এখন পর্যন্ত আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করে এ লক্ষ্য অর্জনে বিএনপিকে অন্তত ১০টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দলের শীর্ষ নেতারাও। প্রায় দেড় দশক ক্ষমতার বাইরে থাকার পর থেকে সাংগঠনিকভাবে মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত দলটির জন্য এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা কঠিন বলে মনে করেন তারা।

তবে দলের নেতারা দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করছেন। সরকারি দলের হামলা, স্থানে স্থানে পুলিশি ব্যারিকেড এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বিভাগীয় সমাবেশে বিপুল জনসমাগম বিএনপিকে উৎসাহিত করেছে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।

তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ধরন, সংকটের গভীরতা ও পরিধি না বোঝার কারণে কৌশল প্রণয়নে বিরোধী দলগুলো বরাবরই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দল এখন অনেকটা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ক্ষমতার পরিবর্তন সহজ নয়। বিশাল জনসভা দিয়ে চূড়ান্ত দাবি আদায় করা যাবে কি না সন্দেহ।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি লাগাতার হরতাল-অবরোধ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনী মঞ্চ অর্জনে ব্যর্থ হয়। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা শক্তিশালী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনে জয়ী হওয়া বিএনপির জন্য কতটা কঠিন হবে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কতটা কঠিন হবে তা সময়ই বলে দেবে।

পর্যবেক্ষক ও দলের নেতাদের দৃষ্টিতে বিএনপির সামনে কী চ্যালেঞ্জ?  ১  অবিচল থাকার মাধ্যমে দলকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রাখা; ২. সংঘর্ষ এড়িয়ে চলা এবং শান্তিপূর্ণ অহিংস গণ আন্দোলন গড়ে তোলা; ৩. হামলার মোকাবিলা করে জনগণকে রাস্তায় নিয়ে আসা; ৪. প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা এবং বলপ্রয়োগের প্রতিরোধ; ৫. যুগপৎ আন্দোলনে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলা; ৬. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সমর্থন আদায়; ৭. বুদ্ধিমত্তা থেকে পরিকল্পনার গোপনীয়তা রক্ষা করুন; ৮. দলের শীর্ষ নেতৃত্বে সংকট; ৯. যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী থেকে দূরত্ব বজায় রাখা এবং ১০. আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাব।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়েই তারা সবকিছু মোকাবেলা করবেন। জনগণের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছেন তারা। তারা শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের মাধ্যমে সব বাধা অতিক্রম করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতের আন্দোলনের সঙ্গে এবারের পার্থক্য হলো, নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নির্যাতন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে জনগণ রাজপথে নামছে।

বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিএনপির ডাকা সাম্প্রতিক আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমান পার্থক্য হলো অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দুর্নীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে অনেক বেশি অসহনীয় করে তুলেছে। ফলে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন চাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং জনজীবনের সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দেশে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তারা কীভাবে সমাধান করবে তার রূপরেখা পেশ করাই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এ প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ২০১৮ সালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় এবং নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় ভোট কারচুপির আগের রাতেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। এখন তারা নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখছে।

দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা : তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রাখা বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বর্তমান ক্ষমতা কাঠামো ঠিক রেখে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে যেতে সরকার বহুমুখী তৎপরতা চালাতে পারে। এতে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে এবং ফাটল সৃষ্টি করে তা ভাঙার চেষ্টা হতে পারে।

তবে বিএনপি নেতারা জানান, কয়েক বছর আগে কয়েকজন শীর্ষ নেতা দল ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। এবার তৃণমূল কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫২টিতে পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত সাবেক ছাত্রদল নেতারা ইতিমধ্যেই পড়েছেন।

মন্তব্য করুন