ময়মনসিংহে আজ ‘বিচ্ছিন্ন’বিএনপির গণসমাবেশ
চট্টগ্রামে বিশাল সমাবেশ করার তিনদিন পর আজ শনিবার ময়মনসিংহে বিএনপির বিভাগীয় গণসভা অনুষ্ঠিত হবে। বড় কোনো সংঘর্ষ না হলেও বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ময়মনসিংহে কার্যত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সার্কিট হাউস মাঠ না পেলেও নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশন মাঠে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি।
গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত ময়মনসিংহে শান্তিপূর্ণ থাকলেও আওয়ামী লীগও মাঠে থাকায় আজ শান্তিপূর্ণ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। পারস্পরিক অনুশীলনে উত্তেজনা রয়েছে। রাতে নগরীর বাতিরকল এলাকায় বিএনপি কর্মীরা জড়ো হলে সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেন বিএনএ ও যুবলীগের কর্মীরা। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। কোতয়ালী থানার পরিদর্শক ফারুক হোসেন সংঘর্ষের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ ককটেল বিস্ফোরণের বিস্তারিত নিশ্চিত করেনি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, জনসমাগম ঠেকাতে আওয়ামী লীগের মহড়া ও পরিবহন নিষেধাজ্ঞা চলছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি- এতে তাদের কোনো হাত নেই। পুলিশ বলছে, পরিবহন বন্ধের কোনো তথ্য নেই। জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার কারণে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার ময়মনসিংহে বাস, ট্রাক, অটোরিকশা- কিছুই চলবে না।
তবে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ময়মনসিংহে আসেন। রাতে মঞ্চ প্রস্তুতির সময় পলিটেকনিক মাঠে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকেই ট্রেন ও নদীপথে আসেন।
যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও গফরগাঁও ছাড়া কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার গফরগাঁওয়ে মহড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের অনুসারীরা গ্রামে গ্রামে পাহারা বসিয়েছে। বিএনপি কর্মীরা ভালুকা, শ্রীপুর গিয়ে সেখান থেকে জড়ো হচ্ছেন ময়মনসিংহে।
বাধা না দিলেও গতকাল ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। বিকেলে নবীনবাজারে বিএনপি কার্যালয়ের পাশে এবং রাতে সমাবেশস্থলের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও মহড়া হয়।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুলিশের গুলি, হামলা ও মিথ্যা মামলা। বিএনপি নেতাদের দাবি- লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে।
২০১৮ সালে বিএনপি সর্বশেষ ময়মনসিংহে সমাবেশ করেছিল। কিন্তু সেবার রাতে কৃষ্ণচূড়া চত্বরের মতো ছোট ছোট জায়গায় সমাবেশ হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, প্রশাসন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে বলেছে। অবশেষে মাঠের অনুমতি দিল পলিটেকনিক। কর্দমাক্ত মাঠটি সংস্কার করে গণপরিবহন চালু রাখার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি।
বিভিন্ন জায়গায় তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ইমরান সালেহ বলেন, ‘নগরজুড়ে মহড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ উস্কানি দিচ্ছে। লাঠি ও বাঁশ আনা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। কিন্তু বিএনপি কর্মীদের নিরাপত্তা দেবে কে?’ গতকাল রাতে দেখা যায়, লাঠিসোঁটা নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
সমাবেশস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নগরীর রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, তারা বিএনপির সমাবেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে নৈরাজ্য হলে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।
দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল জানান, শনিবার আওয়ামী লীগ কোনো সমাবেশ বা সভা করবে না। তবে প্রতিটি মোড়ে নেতাকর্মীরা থাকবেন। নৈরাজ্য হলে তারা প্রতিবাদ করবে।
মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার কোনো দলীয় নির্দেশ নেই। নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জনগণ ও পুলিশের ওপর বিএনপির হামলার জবাব দেওয়া হবে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, গফরগাঁও থেকে বিএনপির কর্মীদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিকেলে প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যানবাহন বন্ধ থাকলেও ভিড় আসবে পায়ে হেঁটে।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি বিএনপি। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, কাউকে লাঠি-বাঁশ আনতে দেওয়া হবে না। নিরাপত্তার জন্য শহরজুড়ে থাকবে পুলিশ।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, জেলা থেকে ময়মনসিংহগামী বাস চলাচল করছে না।