মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, ইলিশ ধরার অপেক্ষায় জেলেরা
অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা আজ রোববার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। মা-ইলিশ রক্ষায় ছয়টি অভয়াশ্রমে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
২২ দিন পর জেলেরা মাছ ধরতে জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দীর্ঘদিন পর নদীতে নেমে কাঙ্খিত মাছ ধরার আশায় তারা।
শেষ মুহূর্তে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর হাজার হাজার জেলে ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার অন্তত নয় হাজার জেলে জাল ও নৌকাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত।
এসব এলাকার জেলেরা বলছেন, বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশের খবর খুব একটা শোনা যায়নি। ফলে নদী ও সাগরে নেমে আশানুরূপ মাছ পাওয়ার আশা করছেন জেলেরা।
আর বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রজননের পর ইলিশের ডিম রক্ষার পাশাপাশি ডিম থেকে জাটকা নিধন করা গেলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। সরকারের উদ্দেশ্যও সফল হবে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মা-ইলিশ রক্ষায় অভিযানে সাত লাখ মিটার জাল উদ্ধার করা হয়েছে। ২৭ জেলেকে আটক করা হয়েছে এবং পাঁচটি নৌকা জব্দ করা হয়েছে। জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কেউ কেউ আবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা পেয়েছেন।
এদিকে প্রজনন মৌসুমে গত বছরের তুলনায় এবার রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বেশি ইলিশ এসেছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, গত ২২ দিন ধরে ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় নদীতে অভিযান চালাতে গিয়ে তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তারা বলছেন, ইলিশ এখন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পেরিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ হয়ে ভারতীয় এলাকায় চলে যাচ্ছে।
রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর পদ্মা নদীতে বেশি ইলিশ এসেছে। তারা গোদাগাড়ী উপজেলায় ইলিশের সন্ধান পায়। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ হয়ে পদ্মা নদীর ভারতীয় এলাকায় ইলিশ যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, “ইলিশ একটি সামুদ্রিক মাছ। এটি ডিম ফোটানোর জন্য এই সময়ে মিঠা পানিতে ছুটে যায়। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকারের দেওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স। অভিযানে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও জেলা টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে জেলেদের জন্য ৪০ কেজি চাল প্রদান করা হয়েছে।
চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় গত ২১ দিনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারে ৩৭২ জেলেকে আটক করেছে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমা জানান, অভিযানে নৌ-পুলিশ কর্তৃক ১৭২ জেলেকে আটক করা হয়েছে এবং টাস্কফোর্সের হাতে ২০০ জেলেকে আটক করা হয়েছে।
২২ দিন ধরে বেকার থাকা ভোলার ৭ উপজেলার প্রায় দুই লাখ জেলে ইতোমধ্যে নেট-ট্রলার ও ট্রলারের ইঞ্জিন মেরামত সম্পন্ন করে মাছ ধরার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২১ দিনে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ৬০৫টি অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪০০ অসাধু জেলেকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ১২৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩৫০ জনের বেশি জেলেকে জরিমানা করা হয়েছে। আর নাবালক হওয়ায় বাকি জেলেরা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। এছাড়া তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ১৯ লাখ ৬০ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, আজ মধ্যরাত থেকে জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে নামবে। এ বছর নদীতে পানির চাপ বেশি এবং প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে জেলেরা প্রচুর মাছ পাবে এবং তাদের অতীতের বকেয়া পরিশোধ করতে পারবে।