• বাংলা
  • English
  • আন্তর্জাতিক

    মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্থান নিতে চায় চীন?

    বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির ভূমিকা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। এতে একটি প্রশ্ন সামনে আসে- চীন কি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দখল করে আছে? তবে বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের সামরিক উপস্থিতি এটিকে ওয়াশিংটনের থেকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে।

    পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতিকে সচল রাখতে চীনের কেন্দ্রীয় ভূমিকা এবং ইউক্রেনে আগ্রাসনের বিষয়ে দেশটির মস্কোপন্থী অবস্থান তীব্র সমালোচনা করেছে। তারপরও বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রবর্তক হিসেবে নতুন সাফল্য চীনের অবস্থানের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। দেশটি এখন গভীরভাবে বিশ্বব্যাপী সংঘাত নিরসনের প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, বেইজিং বিশ্বের শান্তির দূত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

    ফেব্রুয়ারিতে ইরান-সৌদি আলোচনা শেষ হওয়ার আগে, বেইজিং আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ চালু করে।

    চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন গ্যাং গত সপ্তাহে বলেছেন যে বেইজিং ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতেও প্রস্তুত।

    জার্মানির আর্নল্ড-বার্গস্ট্রাসার-ইনস্টিটিউট ফ্রেইবার্গের সহযোগী ফেলো জুলিয়া গুরোল-হ্যালার বলেন, সৌদি-ইরান চুক্তি চীনের ভবিষ্যত শান্তি উদ্যোগের জন্য একটি লঞ্চপ্যাড হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি একটি উদাহরণ যে চীন বিরোধের মধ্যস্থতায় আগের চেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এসব ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের শক্তিশালী অবস্থান ভঙ্গুরতার পথে। পারমাণবিক চুক্তি থেকে ইরানের প্রত্যাহার, সৌদি আরবের সঙ্গে অশান্ত সম্পর্ক এবং ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের নীতিনির্ধারকদের অবিশ্বাস আরও গভীর হয়েছে।

    তবে এটা নিশ্চিত যে চীন খুব শিগগিরই মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিতাড়িত করতে পারবে না। এর প্রধান কারণ হল উপসাগরীয় অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন সেখানে কয়েক ডজন সামরিক ঘাঁটি সহ মিত্রদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এই অঞ্চলে নিরাপত্তা উদ্বেগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সর্বাগ্রে থাকবে। এর মাধ্যমে চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে দেশগুলো লাভবান হতে পারে। এছাড়া বেইজিংকে নিরপেক্ষ বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে দেখা হয়। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে, রাজনীতি থেকে মানবাধিকার পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থেকেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি চীনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের তুলনায় কম বিতর্কিত মধ্যস্থতাকারী করে তোলে।

    চীন দীর্ঘদিন ধরে উপসাগরীয় দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশটি এই অঞ্চলে প্রচুর বিনিয়োগ করছে।

    তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের চীন-মধ্যপ্রাচ্য প্রকল্পের পরিচালক জাকিহ ইয়াজদানশেনাস বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি গড়ে তোলার ক্ষমতা বা ইচ্ছা বেইজিংয়ের নেই। তবে দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আরেকটি বিষয় হল সৌদি-ইরান সম্পর্ক স্থায়ী হবে কিনা বা উভয় পক্ষ শর্ত ভঙ্গ করলে চীন কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা স্পষ্ট নয়। তাই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অবস্থানকে ছাপিয়ে যেতে চীনকে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

    মন্তব্য করুন