ভোট বন্ধে খর্ব হচ্ছে ইসির ক্ষমতা ।সংসদে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব
‘জনপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আইন, ২০২৩ সংসদে পেশ করা হয়েছে, অনিয়মের কারণে নির্বাচন বন্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা সীমিত করে। সোমবার সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী আইনের এই সংশোধনী খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বিল উত্থাপনে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, ইসির ক্ষমতা কমানোর এই প্রস্তাব সংবিধান পরিপন্থী। কিন্তু তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে গত ২৮ মার্চ মন্ত্রিসভা বিলটির নীতিগত অনুমোদন দেয়।
বিদ্যমান আইনে অনিয়ম বা বিদ্যমান বিভিন্ন অপকর্মের কারণে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে পারে। এই ক্ষমতা সীমিত করে শুধু ভোটের দিন ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা ইসির হাতে থাকে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের কোনো আসনের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে পুরো আসনের নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যে সব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে শুধুমাত্র সেসব (এক বা একাধিক) ভোট কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা ইসির রয়েছে।
এ ছাড়া মনোনয়নপত্রের সঙ্গে টিআইএন ও ট্যাক্স রিটার্নের কপি জমা দেওয়া, ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া বা যন্ত্রপাতি নষ্ট করার শাস্তি। খসড়া আইনে ভোট প্রদান করা হয়েছে।
বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১ (A) ধারায় বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনের সময় বলপ্রয়োগ, ভীতিপ্রদর্শন এবং চাপ সহ বিভিন্ন বিদ্যমান অসৎ আচরণের কারণে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে পারবে না। যুক্তিসঙ্গত, সুষ্ঠু ও আইনানুগভাবে নির্বাচন, যে কোনো ভোটকেন্দ্র বা মাঠ, ক্ষেত্রমত, নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট প্রদানসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।
বিদ্যমান আইনের এই ধারা অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষণার পর কমিশন ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে কিনা তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করতে ইসি এই বিধানে আরেকটি উপ-ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। কমিশন প্রস্তাবে বলেছে, অনিয়ম, ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ থাকলে কোনো কেন্দ্র বা পুরো নির্বাচনী এলাকার ভোটের ফলাফল স্থগিত করতে পারে ইসি। এরপর দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে একটি কেন্দ্র বা পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন করতে পারে।
তবে সংসদে উত্থাপিত বিলের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, যেসব কেন্দ্রে (এক বা একাধিক) অভিযোগ রয়েছে কেবল সেসব কেন্দ্রে ইসি ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে এবং প্রয়োজনে নতুন নির্বাচন করতে পারবে।
এ ছাড়া ৯১ (এ) ধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধনীতে আরপিওর ধারা৯১-এর এই উপ-ধারায় ‘নির্বাচন’ শব্দের জন্য ‘পোলিং’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাফরের ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দিয়েছে। কমিশন তার দায়িত্ব পালনে স্বাধীন হবে। এখন আইন যদি স্বাধীনতা বিলুপ্ত করে, তাহলে কমিশন স্বাধীন থাকবে কী করে?
আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আশা প্রকাশ করে ফখরুল ইমাম বলেন, গাইবান্ধা নির্বাচন খারাপ হওয়ায় কমিশন বন্ধ করে দিয়েছে। আমি জানি না কেন আইনমন্ত্রী এখন আবার এটাকে সামনে আনলেন – নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারে না। ভোটকেন্দ্র বন্ধ করতে পারে, যেখানে গোলযোগ আছে সেখানে বন্ধ করতে পারে। মানে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আছে। নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধার মতো পুরো নির্বাচন বন্ধ করা প্রয়োজন মনে করলে সেই অধিকার খর্ব করা হয়েছে।
ফখরুল ইমাম বলেন, এই সংশোধনী সংবিধান ও গণতন্ত্রের চেতনার পরিপন্থী। নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী এই সংশোধনী পাস হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধনী সংবিধান বা গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয়। বিদ্যমান আইনের ৯১(এ) ধারা অনুযায়ী, কমিশন যদি দেখে যে কোনো নির্বাচনী এলাকায় কোনো সমস্যা, বিভ্রান্তি বা ভোটগ্রহণে বাধা রয়েছে, তাহলে নির্বাচন কমিশন পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এখানে সংশোধনী আছে, কোনো ভোট কেন্দ্রে গোলযোগ থাকলে; ধরুন, আমার নির্বাচনী এলাকায় ১১৪টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। দু-তিনটায় বিভ্রান্তি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলে ওই দুই-তিনটায় নির্বাচন বন্ধ করা যেতে পারে।