• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ভোটে হেরে টাকা ফেরত দাবী, তদন্তে নেমেছে পুলিশ

    আওয়ামী লীগ নেতা শেখ জাকির হোসেন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভের পথ সহজ করার মৌখিক চুক্তিতে স্থানীয় থানার ওসিকে ২৭ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন। কিন্তু জিততে পারেননি। ভোটে হেরে ঘুষের টাকা ফেরত পেতে ওসি মো. গোলাম কবিরকে ধর্না দিতে থাকে। টাকা ফেরত না দিয়ে ওসিকে কক্সবাজারে বদলি করা হয়।
    কোনো সমাধান না পেয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ৫ কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগে তিনি কীভাবে এবং কার মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেন। শেখ জাকির হোসেন সাতক্ষীরা আশাশুনি প্রতাপনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. তিনি দুই মেয়াদে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তৃতীয় জয়ী আশাশুনির সাবেক ওসি মো. তিনি গোলাম কবিরের সঙ্গে এই লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
    এদিকে, ২৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ফৌজিয়া খান পুলিশ মহাপরিদর্শককে ভিকটিমদের টাকা ফেরত ও ঘটনার তদন্তের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পুলিশ সদর দফতরের পক্ষে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমানকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান আশাশুনি সাবেক ওসি মোঃ গোলাম কবির, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ জাকির হোসেনসহ ৬ জনকে ১৯ ডিসেম্বর তার কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। সোমবার তাদের বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে।
    নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী আবু দাউদ ৫ প্রার্থীর মধ্যে ৮ হাজার ৪৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। শেখ জাকির হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ২০২ ভোট। এর আগে শেখ জাকির ২০১১ ও ২০১৬ সালে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে শেখ জাকির হোসেন উল্লেখ করেন, ‘২০১১ ও ২০১৬ সালে আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতাপনগরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম।
    এবার বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের কিছু নতুন নেতা আমাকে হারানোর নীলনকশা তৈরি করেছেন। তখন আমি নিরুপায় হয়ে আশাশুনি থানার ওসি গোলাম কবিরের সঙ্গে কথা বলি। তিনি ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকার হিসাব দিয়ে বলেন, এই টাকা দিতে পারলে বিজয়ী হিসেবে দিতে পারব।
    অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘গত ১ জানুয়ারি সকাল ১১টায় আমি নিজেই ওসির কক্ষে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। ৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় আমার বড় ভাই শেখ আজুহার রহমানের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা এবং ৪ জানুয়ারি বিকেলে তার অফিসে আরো সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি সকাল ৬টায় ৯টি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের খরচ বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং পুলিশ ইনচার্জকে ৯০ হাজার টাকা দেই।
    শেখ জাকির হোসেন বলেন, নির্বাচনের পর ওসির সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরত চাইলে কয়েকদিন সময় চাইবেন। এর মধ্যে ওসিকে বদলি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় পাঠানো হয়। এমনকি সেখানে গিয়ে টাকা চাইলে তিনি বলেন, আমি টাকা খরচ করেছি। পাশের আরেক ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে কয়েকবার সদর থানায় গিয়েছি। একপর্যায়ে তিনি বদলি হয়ে কক্সবাজার চলে যান। এরপর ২৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৬ জনকে চিঠি দিয়েছিলাম। তাতে কাজ না হওয়ায় ৫ জুলাই আবার লিখলাম। কয়েকদিন আগে আশাশুনি থানা থেকে ফোন করে জানানো হয়, আমাকে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ডাকা হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বরে।
    বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমান বলেন, আশাশুনির সাবেক ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সদর দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সোমবার তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
    অভিযুক্ত মোঃ গোলাম কবির বর্তমানে কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানার ওসি। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট অভিযোগ। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, এখন কি এমন সুষ্ঠু নির্বাচনে কাউকে জয়ী করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব?

    মন্তব্য করুন