ভেজা সড়কেই কার্পেটিং করা হচ্ছে
সহকারী প্রকৌশলীর নির্দেশে কাজ চলছে # সহকারী প্রকৌশলীর মতে এভাবে কাজ করলে কোন সমস্যা হবে না
নাটোরের সিংড়া উপজেলার চাতারদীঘি ইউনিয়নের পাওতা মাদ্রাসা-বাঁশবাড়িয়া সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চলমান এ কাজ দেখে সবাই হতবাক। টানা বৃষ্টি ও ঘোলা পানিতে রাস্তার কার্পেটিং কাজ চলছে। সহকারী প্রকৌশলী রহতম আলীর নির্দেশে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
সড়ক সংস্কারের নামে এ ঘটনা চলতে দেখেও প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন না স্থানীয়রা। এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে ও অফিসে গিয়েও উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। সোমবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে সিংড়ায়। চলমান রাস্তার কার্পেটিং সম্পর্কে জানতে চাইলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী রহমত আলী বলেন- ‘বৃষ্টিতে কার্পেটিং এর কাজ চললে আপনার সমস্যা কোথায়?’ পরে বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী আহমেদ রফিককে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সন্ধ্যায় পাওতা-বাঁশবাড়িয়া সড়কে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও কাদা-পানিতে ভরা সড়কে কার্পেটিং করা হচ্ছে। সারি সারি নীরব দর্শক সেখানে দাঁড়িয়ে এ ঘটনা দেখছেন। সেখানে উপস্থিত নিখিরা গ্রামের নাসির মন্ডল জানান, বৃষ্টির মধ্যেও কার্পেটিং এর কাজ চলছে।
স্থানীয় লোকজন আপত্তি করলেও দায়িত্বরত কর্মকর্তা (উপ-প্রকৌশলী) তা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজ শেষ হওয়ার আগেই রাস্তার বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছে। বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জামিল হোসেন জানান, এর ঠিকমতো পিচ না থাকায় কাদা-পানি ভরা সড়কে কার্পেটিং করা হচ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, জীবনে এই প্রথম তিনি বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিং এর কাজ করছেন। ভেজা রাস্তায় কার্পেটিং কাজ করে না। এখানে কাজ করতে না চাইলেও দায়িত্বরত কর্মকর্তা তাকে বাধ্য করেন। কার্পেটিং কাজে নিয়োজিত রোলার চালক হাবিবুর রহমান জানান, দায়িত্বরত কর্মকর্তার নির্দেশে তার কিছুই করার নেই। তিনি শুধুমাত্র উপরের নির্দেশ পালন করছেন। ঠিকাদার আসাদুজ্জামান লিটন জানায়, সড়কের কার্পেটিং অংশ সিলগালা করার কথা ছিল। তবে তার অজান্তেই বৃষ্টিতে কিছু অংশ পুনরায় কার্পেট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়েও কোনো সাহায্য পাইনি। উপজেলা প্রকৌশলী আহমেদ রফিক বলেন, কাজটি অনেক আগেই হয়েছে, তাই অফিসে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সিলমোহর হওয়ার কথা ছিল। কাদা-পানিতে গালিচা বিছানোর কাজ সে কিছুই জানে না। এদিকে কাজের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী রহমত আলী মুঠোফোনে বলেন, বৃষ্টিতে কাজ করলে ক্ষতি কী? কাদা-পানিতে কাজ করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাদা-পানিতে কাজ করলেও কোনো সমস্যা হবে না।’ বাঁশবাড়িয়া বাবলুর ছাতারদীঘি ইউনিয়নের পাওতা মাদ্রাসা থেকে পুকুরপাড় পর্যন্ত ১ হাজার ৫২০ মিটার গ্রামীণ সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পেয়েছে জলি এন্টারপ্রাইজ নামের নাটোরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। পরে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজটি কিনে নেন সিংড়ার আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান লিটন।