জাতীয়

ভাস্কর্য ভাঙ্গার বিচার হয় না

বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব, দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড

স্মৃতি সংরক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নিরপেক্ষ শিল্পকর্ম ধ্বংসের ক্ষেত্রে দেশে কার্যকর তদন্ত ও বিচারের নজির নেই। উগ্রপন্থীরা প্রকাশ্যে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে, তবে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। এই শিল্পকে রক্ষার জন্য কোনও নির্দিষ্ট আইন না থাকায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।তবে এই ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে দোষীদের অতীতে আর কখনও চিহ্নিত করা যায়নি বা তারা বিচারের মুখোমুখি হতেও পারেনি। পাল্টা হুমকির কারণে ভাস্কর্যগুলি অপসারণ বা অপসারণের ঘটনাও ঘটেছে।

গত শুক্রবার কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সারা দেশে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করার পরে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার মাত্র দুদিন আগে দুর্বৃত্তরা বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে ‘মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্য’ এর একটি অংশকে ভেঙে দেয়। মধুসূদন দে এবং তিনি যে রেস্তোরাঁটি চালাচ্ছেন তার স্মৃতি বাংলাদেশের বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধে নিহত মধুর স্মৃতিতে ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনার পরপরই ভেঙে ফেলার কানের অংশটি মেরামত করে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে এই কাজটি কী কারণে এবং কোন উদ্দেশ্যে করেছে তা জানতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি মামুন আর রশিদ বলেন, ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। বিষয়টি কীভাবে ঘটেছিল তাও আমি খতিয়ে দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কাজ করছে। তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনও মামলা বা জিডি হয়নি।কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সহ সকল ভাস্কর্য রক্ষার নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।আইনবিদরা মনে করেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা দরকার।তারা বলছেন যে কোনও সাধারণ ভাস্কর্য রক্ষার জন্য দেশে সুনির্দিষ্ট কোনও আইন নেই। ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংরক্ষণ’ নামে আইনটি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাতিল করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য রক্ষার জন্য দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি সরকারী সম্পত্তি হিসাবে রক্ষার জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর ১৫ (৩) এবং ২৫ (ডি) এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৩ ও ৪ ধারার প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। এবং যদি এই ধারায় বর্ণিত অপরাধের সাথে জড়িত প্রমাণিত হয় তবে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অন্য কোনও শর্তে আনা সম্ভব। ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে জাতির পিতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি সরকারি সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত এবং ভন্ডদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া তারা মনে করেন যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি রক্ষার জন্য বিশেষ আইন করা দরকার। তারা বলছেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় শাস্তি দেওয়া হলে এ জাতীয় অপরাধ রোধ করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন