• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নিয়ে বিপাকে জ্বালানি বিভাগ

    ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের ওপর জোর দিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। জানা গেছে, দেশের গ্যাসের চাহিদা মেটাতে ভবিষ্যতে গ্যাসের চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণ করা হবে। কিন্তু এই এলএনজি আমদানি করতে চট্টগ্রামে নির্মিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নিয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে সরকার। সামান্য প্রাকৃতিক সংকটে এলএনজি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে গ্যাস সরবরাহের চেইন ঠিকমতো কাজ করছে না। সারাদেশে গ্যাস সংকট বাড়ছে, শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমছে। লোডশেডিংসহ নানা সংকট রয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনালের কথা ভাবছে সরকার।

    সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রিমালে সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটিতে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মেরামত শেষ হলে এলএনজি সরবরাহ করতে আরও অন্তত তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি দেশের বৃহত্তম গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। টাইটাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, তিতাস প্রতিদিন অন্তত ১৮০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেতেন। এখন তা পাচ্ছে মাত্র ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি বড় ধরনের গ্যাস সংকট তৈরি করছে।

    জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত দুটি টার্মিনালের একটি সামিট গ্রুপের। আরেকটি হল সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। প্রতিটির ধারণক্ষমতা এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। আর এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনালের ধারণক্ষমতা প্রতিদিন ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এমনকি দুটি স্থানীয় সরবরাহ ভাসমান টার্মিনাল থেকে পূর্ণ ক্ষমতার এলএনজি সরবরাহের পরেও, জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় কোনো কারণে একটি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সারা দেশে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, শিল্প ও সিএনজি খাতের মধ্যে গ্যাস রেশন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে পেট্রোবাংলাকে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে কিছু এলএনজি টার্মিনাল প্রায়ই বন্ধ থাকে।

    জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ প্রতিনিয়ত কমছে। আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে দেশের শিল্প খাত। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি নিরবচ্ছিন্ন এলএনজি সরবরাহ করতে পারছে না। যার প্রভাব পড়ছে গ্যাস সরবরাহে।

    তিনি বলেন, সার্বিকভাবে ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের ওপর জোর দিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। এ লক্ষ্যে পটুয়াখালীর পায়রা এলাকায় ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনালের স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ জন্য গত সপ্তাহে জ্বালানি বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

    ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগর এখন আগের চেয়ে বেশি দুর্যোগপ্রবণ। শুধু দুর্যোগের ক্ষেত্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে। এ জন্য বিকল্প উৎস তৈরির চেষ্টা চলছে। এদিকে সামিট অ্যান্ড এক্সিলারেটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুটি কোম্পানির সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি রয়েছে যা ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল। চুক্তি শেষে জ্বালানি বিভাগ সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।

    এদিকে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর এলাকায় আরেকটি ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও উপযুক্ত স্থানের অভাব রয়েছে। এলএনজিবাহী জাহাজ কোন চ্যানেলে আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সম্প্রতি মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ এলাকায় ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা সমস্যার কারণে তা চূড়ান্ত হয়নি।

    পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

    ট্রান্সফর্মড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) এক কর্মকর্তা বলেন, সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল হঠাৎ ভেঙে পড়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির আদেশ তাড়াহুড়ো করে বাতিল করতে হয়েছে। আমি অর্ডার বাতিল করলে, বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কাতার কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে। তা না হলে বাংলাদেশকে জরিমানা দিতে হবে।

    সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনার জন্য ২০২৬ সালের পর ধীরে ধীরে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়বে। এ লক্ষ্যে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ছাড়াও আরও তিনটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি সমুদ্রে (এফএসআরইউ) এবং অন্যটি স্থলভাগে মোতায়েন করা হবে। তিনটি টার্মিনালের ধারণক্ষমতা ১,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে সামিট গ্রুপ কক্সবাজারে একটি স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।