• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ভরা মৌসুমেও দিনাজপুরে চালের সংকট

    দিনাজপুরে এখন বোরো ধানের ভরা মৌসুম। বাজার সয়লাব নতুন ধান। মিল মালিকরা সমানভাবে ধান কিনে মজুদ করছেন; কিন্তু ধানের ক্ষেত্রে চিত্র উল্টো। চালের অভাবে অনেক খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা তাদের দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। সংকটের জন্য মিল মালিকদের দায়ী করছেন তারা। মিলাররা দাম বাড়াতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মিল মালিকরা বলছেন, চালের চাহিদা বেশি থাকায় তারা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। নতুন ধানের দাম বাড়লেও চাল তৈরির খরচ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।

    রোববার দিনাজপুরের মোকাম বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটের অধিকাংশ পাইকারি দোকান বন্ধ ছিল। দু-একটি দোকান খোলা থাকলেও চালের দাম আকাশ ছোঁয়া। এক সপ্তাহে চালের দাম বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, অতীতে ধানের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বাড়েনি।

    চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, টাকা দিয়েও মিলারদের কাছ থেকে চাল পাচ্ছেন না তারা। ফলে অনেকেই দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। পাইকারি চাল ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, আমরা চাল পাচ্ছি না। মিলাররা বলছেন, ধানের দাম বেশি। আপনি চাল তৈরি করে সরকারকে দিতে পারবেন না।

    মেসার্স ফুড স্টোরের স্বত্বাধিকারী আলাল উদ্দিন বেপারী বলেন, ব্যস্ত মৌসুমে এত দাম ও চালের সংকট তিনি আগে দেখেননি। আমি বুঝতে পারছি না সমস্যাটা কোথায়, নজরদারি নাকি সিন্ডিকেট। দুই সপ্তাহে মাত্র তিন ট্রাক চালের অর্ডার দিয়েছি কিন্তু পাইনি। যতই দিন যাচ্ছে প্রতি ট্রাক চালের দাম বাড়ছে ২০ হাজার টাকা। দেশের অর্ধেক চাল মজুদ করে রেখেছে কর্পোরেট ব্যবসায়ী ও মিলাররা। সরকার সবকিছু জেনেও উদাসীন।

    বাহাদুর বাজার এনএ মার্কেট চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজগর আলী বলেন, অধিকাংশ মিলার ধান কেনা শেষ করে চালও তৈরি করছে। ধান কাটা ও মাড়াই মৌসুমে এত দাম দেখিনি। মিলাররা এখন চাল দেয় না, কথা বলতেও চায় না।

    প্রচুর ধান থাকলেও তা মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাবধানে চালের দাম কমানো যাচ্ছে না। সরকারের উচিত খোলা বাজারে চাল সরবরাহ করা।

    বর্তমানে দিনাজপুরে ২ হাজার ১২২টি বিভিন্ন রাইস মিল রয়েছে। মিলগুলো উৎপাদনে থাকলে চাল সংকটের প্রশ্নই ওঠে না। বাজারে ধানের অভাব নেই।

    এ বিষয়ে দিনাজপুর রাইস মিল মালিক গ্রুপের মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, মিলাররা চাল দিচ্ছে না এমন অভিযোগ কেউ করেননি। স্পষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    বাংলাদেশ মেজর অ্যান্ড অটো মেজর হাস্কিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং পাটোয়ারী বিজনেস হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, “ইরি-বোরো মৌসুমে আমরা মিল মালিকরা অনেক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছি। গত বছরের চেয়ে এবার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি দরে ধান কিনতে হচ্ছে। ফলে চাল তৈরির খরচও বাড়ছে। বাজারে চালের চাহিদা এখন এত বেশি যে মিল মালিকরা তা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

    দিনাজপুরের খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। তবে মিলার বা ব্যবসায়ী অবৈধভাবে চাল মজুদ করলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

    মন্তব্য করুন