ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড, ১ কোটি ৪ লাখ টাকা জরিমানা।ভুয়া এফডিআর রশিদ দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ
গ্রাহকের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের জন্য ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), বা নিজাম রোড শাখার অগ্রাধিকার ব্যবস্থাপক। ইফতেখারুল কবিরকে ২৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার অপর আসামি চট্টগ্রামের নিশাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদুল হাসানকে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৭৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছর চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
দুদকের পিপি মাহমুদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দুই আসামিকে যথাক্রমে ২৬ বছর ও ১৩ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পুরো বিচার চলাকালে বিচারক ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪৭৭ (ক), ১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ইফতেখারুল কবির ২০১৪ সালের ৩ জুলাই ইস্টার্ন ব্যাংকে যোগ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি আর নিজাম রোড শাখায় চাকরি শুরু করেন। এরপর থেকে সে অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বিভিন্ন গ্রাহকের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে।
এভাবে অনন্যা বড়ুয়া, রূপম কিশোর বড়ুয়া ও সুপ্রভা বড়ুয়ার যুগ্ম হিসাবধারীদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে যৌথ হিসাবধারীরা আর নিজাম রোড শাখায় হাজির হয়ে ইফতেখারুল কবিরকে বিভিন্ন সময়ে তাদের অ্যাকাউন্টে জমা ৫০ লাখ টাকার এফডিআর খুলতে বলেন। কিন্তু ইফতেখারুল কবির তা না করে ভুয়া এফডিআর রশিদ জাল প্যাড সিল ও জাল স্বাক্ষর দিয়ে যৌথ হিসাবধারীদের কাছে সরবরাহ করেন। এছাড়াও, তাদের কাছ থেকে তহবিল স্থানান্তর ফর্ম স্বাক্ষরিত হয়। অভিযুক্ত ইফতেখারুল কবিরের জবানবন্দিতে বলা হয়, নগরীর আন্দরকিল্লার জাফরি প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী উক্ত জাল এফডিআর রশিদ ও প্যাড ছাপিয়ে জালিয়াতিতে সহযোগিতা করেন। আদালত সূত্র আরও জানায়, পরে আসামি ইফতেখারুল কবির নিশাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদুল হাসানের অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন।
জালিয়াতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের ষড়যন্ত্র করে তারা। সূত্র জানায়, দুদকের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর ইফতেখারুল কবির ও মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম। মামলার তদন্তও করেন তিনি। তদন্ত শেষ করে তিনি ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে গত বছরের ২১ জানুয়ারি বিচারক তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়ের করা চার্জশিট গ্রহণ করে দুই আসামীকে অভিযুক্ত করে বিচারের নির্দেশ দেন।