• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ব্যাংকে ‘শর্ষের ভূত’, তথ্য হাতিয়ে জালিয়াতির ছক

    কোনো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টধারীর লেনদেনের তথ্য গোপন রাখতে কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। হিসাবরক্ষক ছাড়া অন্য কারো কাছে কোনো অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রকাশ করা হয় না। কারণ এতে প্রতারণার ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সার্ভার থেকে দুই শাখার শতাধিক অ্যাকাউন্টধারীর নথিপত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা। হিসাব নম্বরে কত টাকা লেনদেন হচ্ছে এবং কত টাকা জমা হয়েছে তা জানার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি চক্র টানা দুই দিন ধরে এ অপকর্ম চালিয়ে আসছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে কিছু অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে তাদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট নম্বরে অর্থ স্থানান্তর করা। এভাবে তারা বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে  অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ছক কষেছিলেন তারা।

    বৃহস্পতিবার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও তার নয় সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর ব্যাংকিং খাতে জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। গ্রেফতারকৃতদের দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ভাটারা থানা পুলিশ।

    তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রিংয়ের সদস্যরা তিন মাস ধরে কাজ করছিলেন, চারটি ধাপে বিভক্ত। প্রথম ‘কাজ’ হিসাবে, তারা ইউনাইটেড হাসপাতাল এবং ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে RGS এর মাধ্যমে প্রায় ১৮ কোটি ৫০ লাখ প্রায় সরিয়ে ফেলছিল। কিন্তু ব্যাংক ম্যানেজারের দক্ষতার কারণে তারা ধরা পড়ে যায়। আরটিজিএস ব্যবহার করে মানি লন্ডারিং স্কিম দেশে ব্যাঙ্কিং লেনদেন সম্পর্কে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

    যেভাবে পরিকল্পনা : তথ্য অনুযায়ী, চক্রের মূল হোতা নেত্রকোনার মেহের আলীর ছেলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা জাকির হোসেন। তিনি ওই শাখার এসএমই সেলস টিমের দেখাশোনা করতেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সেই ব্যাঙ্কে চাকরি পান। এর আগে তিনি মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।

    পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জাকির স্বীকার করেছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সে তার পরিচিত আনিসুর রহমানের সহায়তা চায়। অনীশ পেশায় একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে ঋণ চাওয়ার অজুহাতে অনীশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গত বছরের নভেম্বরে তারা হাতিরঝিল এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করে প্রাথমিক ছক ঠিক করেন। তারা বলেন, জাকির ব্যাংকের ভেতরেই সব কাজ করবে।

    এবং আপনি বাহ্যিক বিষয় যত্ন নেবেন. পরিবহন ব্যবসায়ী এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিশ্বস্ত লোকদের পরিচালনা করবেন।

    কার দায়িত্ব: তদন্ত কর্মকর্তা জানান, প্রতারক চক্রের ১০ জন বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ব্যাংক কর্মকর্তা জাকির সবকিছু সমন্বয় করতেন। তফসিল অনুযায়ী ইয়াসিন আলী ও মাহবুব ইশতিয়াক ভূঁইয়া তাকে সর্বশেষ তথ্য দেবেন। চক্রের অন্যরা সরাসরি বা মোবাইলে যোগাযোগ করে না। কাট-আউট পদ্ধতিতে ‘কাজ’ সম্পন্ন করার নির্দেশনা ছিল।

    রাজধানীর নীলক্ষেতে ইয়াসিনের একটি ফটোকপির দোকান রয়েছে। যেহেতু তিনি স্বাক্ষর জালিয়াতিতে একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তাই তিনি লক্ষ্যযুক্ত অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নামে জাল নথি তৈরি করার জন্য দায়ী ছিলেন। মাহবুব ইশতিয়াক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করছিলেন। এনআই কর্পোরেশন বিডি লিমিটেড নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের নামে এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর রয়েছে। ইয়াসিনের সঙ্গে আগেও সম্পর্ক ছিল।

    সার্কেলের সদস্য দুলাল হোসেন, মো: আসলাম, আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার দায়িত্ব ছিল ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যাতে মূল গ্রাহকের সঙ্গে মানি ট্রান্সফার অর্ডার হলে বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা না হয়।

    জাকির কেন জড়ালেন : জাকির ব্যাংক কর্মকর্তা হয়েও কেন এমন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত হলেন- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তকারীরা বলছেন, জাকির দাবি করেছেন যে তিনি এক বন্ধুর সাথে ব্যবসায় নেমেছিলেন এবং তার কাছে ৪২ লক্ষ টাকা পাওনা ছিল। অবৈধভাবে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেন তিনি। এ জন্য প্রথমে ওয়ালটন গ্রুপকে টার্গেট করে। পরে চক্রের অন্য সদস্যরা তাকে বড় অঙ্কের হিসাবরক্ষককে টার্গেট করার পরামর্শ দেন। এরপর গত বুধবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের গুলশান শাখার অ্যাকাউন্ট নম্বর দেখে সব তথ্য জানতে পারেন তিনি। জাল কাগজপত্র তৈরি করে ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন।

    মন্তব্য করুন