• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ব্যাংকের টাকা মেরে দেউলিয়া ঘোষণা।ঋণের টাকা পাচারের ভয়

    দুই ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ৩৩৫ কোটি টাকা। এই ঋণের বিপরীতে ঢাকার মিরপুরের ১২ নম্বরে একটি মাত্র ৯ তলা জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ  থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান। তিনি একসময় দেশে বেড়াতে আসলেও অনেক দিন তার দেখা নেই। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএইচএম রায়হান শরীফ দেশে থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। ব্যাংকের টাকা মেরে তারা আইনি প্রক্রিয়া স্থগিত করতে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার জন্য ঢাকার আদালতে আবেদন করেছে।

    জানা যায়, ঢাকার দেউলিয়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ সৈয়দা কানিজ কামরুন নাহার ১১ মে মোট তিনটি মামলা গ্রহণ করেন। এর প্রথম শুনানি হয় ১৫ জুন। মামলার বাদী, খেলাপি, ক্লাসিক সাপ্লাই অ্যান্ড কোমো অ্যাপারেলসের এমডি মোহাম্মদ রাশেদ ও পরিচালক এএইচএম রায়হান শরীফ আবেদনটি করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং পলাতক মোহাম্মদ রাশেদের সাবেক স্ত্রী ফারহানা রাশেদকে আসামি করা হয়েছে। দেউলিয়া ঘোষণা সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের পাওনার পরিমাণ ৩৩৫ কোটি ২৪ লাখ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্লাসিক সাপ্লাইসের পাওনা রয়েছে ১৭৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং কোমো অ্যাপারেলসের কাছে ১৫৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। তাদের অফিসের ঠিকানা রাজধানীর মিরপুরের ১২ নম্বর ব্লকের ৬ নম্বর রোডের একটি প্লট। ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদে প্রকাশিত খেলাপির তালিকায় দুটি কোম্পানির নাম ছিল।

    সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত অফিসের ঠিকানায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এএইচএম রায়হান শরীফের ব্যক্তিগত টেলিফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বারবার কল ও এসএমএস করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

    ব্যবসার শুরুতে ক্লাসিক সাপ্লাই এবং কোমো অ্যাপারেলস চললেও এক পর্যায়ে তাদের মালিকরা ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা বন্ধ করে দেন। তারা ঋণের টাকা পাচার করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পোশাক কারখানার পাশাপাশি সরবরাহকারীর নামে বিপুল পরিমাণ ঋণের সৃষ্টিও সন্দেহজনক। ক্রেডিট কোর্টে মামলা চলমান থাকলেও ব্যাংকের দেউলিয়া ঘোষণার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। প্রথমত- দেউলিয়াত্ব শুধুমাত্র তাদের নামে থাকা সম্পদের বিপরীতে ব্যাঙ্কের ঋণের সম্পূর্ণ পরিশোধ হিসাবে বিবেচিত হবে। ব্যাংকের বকেয়া পুরো টাকা পরিশোধ না করেই পার পাওয়া যাবে। দ্বিতীয় – অন্তত আইনি কার্যক্রমে মহাজন আদালতের রায় স্থগিত করা যেতে পারে।

    গত শনিবার বাইরে থেকে ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থা দেখা যায়। নিচতলায় ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মহিমা জেনারেল স্টোর নামে একটি মুদির দোকান রয়েছে। গ্রামীণফোনের একটি পল্লবী ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং প্রধান সড়কের পাশে একটি স্যামসাং শোরুম। এএইচএম রায়হান শরীফ মাসিক ভাড়া ও অগ্রিম নিয়ে এসব দোকান ভাড়া দেন। ভবনের তৃতীয় তলায় সোনালী ব্যাংকের পল্লবী শাখা। ভবনটির ৬ষ্ঠ ও ৭ম তলা সম্প্রতি একটি পরিবার ভাড়া নিয়েছিল। আর ষষ্ঠ তলায় এসবিসি জিম নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। বাকি সব ফ্লোর এখন খালি। যদিও নোটিশে এই ভবনের নাম ক্লাসিক সাপ্লাই বা কোমো অ্যাপারেলস-এর অফিস ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এই কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত কেউ এখানে আসে না। এমনকি গত আট মাস ধরে কেউ ভাড়া নিতেও আসছে না।

    এখানকার দুই ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ভবনে একটি কোমো অ্যাপারেলসের কারখানা ছিল। ৭ থেকে ৮ বছর আগে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। কারখানার মূল মালিক মোহাম্মদ রাশেদ থাকেন থাইল্যান্ডে। বেশ কিছুদিন ধরে তার দেখা নেই। তার ব্যবসায়িক অংশীদার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এএইচএম রায়হান শরীফ এখন পর্যন্ত ভাড়া আদায় করতেন। গত আট মাস ধরে তাকেও দেখা যাচ্ছে না। ভাড়াটিয়া অগ্রিম হিসাবে পরিশোধ করা টাকা উদ্ধারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন।

    জানা গেছে, কোমো অ্যাপারেলসের সুদ হিসেবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক পাবে ৮ কোটি ৫০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। আর ক্লাসিক সাপ্লাইসের কাছে ব্যাংকের পাওনা ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। বাকি ৩০০ কোটি টাকা পাবে সোনালী ব্যাংক। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের দখলে থাকা মিরপুর-১২ নম্বরের ৯ তলা ভবনকে ঘিরে এই ঋণের সৃষ্টি হয়েছে। ভবনটি বিক্রির জন্য একাধিকবার নিলাম ডাকা হলেও কাঙ্খিত ক্রেতা পাওয়া যায়নি।

    এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সোনালী ব্যাংকের হেড অফিসের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে রমনা কর্পোরেট শাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর রমনা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় গেলে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। শাখা ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে টেলিফোন বা এসএমএস করে যোগাযোগ করা যায়নি।

    মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে অর্থ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ফাইন্যান্স কোর্ট।

    মন্তব্য করুন