• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাইকোর্ট ঘেরাও,১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার ঘোষণা।

    ‘আওয়ামী পন্থী বিচারকদের’ পদত্যাগের দাবিতে বুধবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাইকোর্ট অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাইকোর্টের ১২ জন বিচারপতিকে বিচার কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।

    এদিকে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভের একপর্যায়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের আলোচনার পর এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এসে জানান, আপাতত ১২ জন।

    বিচারককে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ প্রদান না করার অর্থ হল আগামী২০ অক্টোবর যখন আদালত খুলবে, তখন তারা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

    রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ল সোসাইটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ১২ জন বিচারপতি হলেন বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি খিজির হায়াৎ, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন।

    এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের অবিলম্বে পদত্যাগ বা অপসারণের দাবিতে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। এ নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখাও করেন। গত মঙ্গলবার বৈঠক শেষে আইনজীবীরা জানান, প্রধান বিচারপতির আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ৩০ বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ২১ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে।

    এদিকে মঙ্গলবার রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার (গতকাল) হাইকোর্ট অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরই মধ্যে বিচার বিভাগীয় সূত্র জানায়, গতকাল সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানান।

    সকাল সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে (অ্যানেক্স ভবনের সামনে) উপস্থিত হতে থাকে। তাদের বেশিরভাগই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্র দেখে বোঝা যায়। এ সময় বিএনপি সমর্থিত একদল আইনজীবী বিচারকদের অপসারণের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী আইন সমাজ’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজুর ভাস্কর্যের সামনে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শত শত শিক্ষার্থীসহ হাসনাত-সার্জিস সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে হাজির হন। আদালত প্রাঙ্গণে হাসনাত-সরজিসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ‘ঘেরাও, ঘেরাও, ঘেরাও, হাইকোর্ট ঘেরাও হবে’, ‘রক্ত দিয়েছি, আরও রক্ত ​​দেব’ বলে বিক্ষোভ মিছিল করে। ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ফ্যাসিবাদের আস্তানা ভেঙে দাও, ‘ফাসি চাই ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি।

    বিক্ষোভের একপর্যায়ে বিচারপতিদের অপসারণসহ তিন দফা আলটিমেটাম দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। দাবিতে দুপুর ২টার মধ্যে ফ্যাসিবাদী বিচারকদের অপসারণের আহ্বান জানানো হয়েছে; আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের অপসারণ করতে হবে এবং ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। দুপুর ২টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে হাইকোর্ট ঘেরাও করা হবে।

    আল্টিমেটাম চললেও দুপুর ২টার দিকে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে প্রায় সব গণমাধ্যমই খবর প্রকাশ করেছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মকর্তা আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানোর আগেই প্রধান বিচারপতি এ ধরনের সংবাদ প্রচার/প্রচারের কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এদিকে বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো: আকতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলন। তবে বৈঠকের কারণ সম্পর্কে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

    এদিকে হাসনাত আবদুল্লাহ কয়েকজন সমন্বয়কারী ও ছাত্রসহ সুপ্রিম কোর্টের ভেতরের বাগানে প্রবেশ করেন। কিন্তু আদালত ভবনের বাগানে প্রবেশে আপত্তি জানালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ  হাসনাত বাবরের সাথে ঝগড়া ও গাতাহাতি হয় । পরে হাসনাতসহ অন্যরা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঁইয়াসহ কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেন।