শিক্ষা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামীকাল শুক্রবার দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা-কবর জিয়ারত ও ছাত্র গণ গণসংযোগ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে তিনি বলেন, আমাদের মাতৃভূমি আজ এক মহা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ওপর হামলা চালিয়ে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করছে। যদি কাউকে ছাত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তার ফোন চেক করার এবং তাকে নির্যাতন করার দু:সাহস দেখিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, কিন্তু আজ ছাত্র হওয়া অপরাধে পরিণত হয়েছে। তাদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি শিক্ষক সমাজও যারা মানুষ তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের অপমান করা থেকে থেমে নেই তারা। আন্দোলনে সমর্থক ছাত্র-ছাত্রীদের কাউকে পেলে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। পরে পাড়া-মহল্লায় ‘অভিযান’ চালিয়ে গণগ্রেফতারের নামে চালিয়ে যাচ্ছে গ্রেফতার বাণিজ্য। উধাও করার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ সমন্বয়কারীসহ অনেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ৬ সমন্বয়কারীকে আজ ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, সমন্বয়ক আরিফ সোহেলসহ অনেক শিক্ষার্থীকে কারাগারে ও রিমান্ডে নিয়ে এখনো নির্যাতন করছেন তারা। নিপীড়নে পিষ্ট শিক্ষার্থীরা মুক্তির অপেক্ষায়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী চিরতরে পঙ্গু হওয়ার ভয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। অনেক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চোখ, কান, হাত, পা বা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছে।

আবদুল কাদের বলেন, “আজ শিক্ষার্থীরা ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে গ্রেফতার-গুমের আতঙ্কে। শহীদ ও নিখোঁজদের স্বজনদের আর্তনাদে বাংলার বাতাস ভারি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, ক্যাম্পাসের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শেহরিন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর ওপরও হাত তুলেছে পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগ এই জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

কর্মসূচির বিস্তারিত জানিয়ে আবদুল কাদের বলেন, গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশের মসজিদে জুমার নামাজের পর দোয়া ও মোনাজাত করা হবে। মন্দির ও গীর্জাসহ সকল প্রার্থনার স্থানে এবং জুমার নামাজের পর ছাত্রদের গণ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আগামীকালের ‘প্রার্থনা ও ছাত্র গণমার্চ’ কর্মসূচিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করতে শ্রমিক, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামাসহ বাংলাদেশের সকল নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বলেন, “মসজিদের ইমাম ও খতিবদের কাছে আমি আবেদন জানাচ্ছি, জাতির এই সংকটে আপনারা চুপ থাকবেন না। মসজিদের মিম্বর থেকে প্রতিবাদের ঘোষণা দিন। শিক্ষকদের কাছে আমি আবেদন জানাচ্ছি। ও মাদ্রাসার ছাত্ররা, আপনারা এই কঠিন সময়ে ঘরে বসে গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদ না করে ৯ দফা দাবিতে জুমা মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে ‘ছাত্র জনতা গণমিছলি’ বের করুন।