বৈদ্যুতিক শক দিয়ে যুবককে হত্যার অভিযোগে কলগার্লসহ ৩ জন গ্রেপ্তার
বরিশালে গভীর রাতে এক পাওনাদারের কাছ থেকে মোবাইল সেট সংগ্রহের জন্য অফিসে ডেকে পাঠানোর পর চার সন্তানের বাবাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ দুই কল গার্ল সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল বুধবার (৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে বরিশাল শহরের ভাতার খাল এলাকার বান্দ্রোদে জেলা পরিষদ মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল অফিসে এই ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক বেল্লাল হোসেন রাজ (৩৪) বরিশালের কাউনিয়া থানার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম চর আইচা গ্রামের মো. আব্দুল হক রাজের ছেলে। দুই মাস বয়সী ছেলে এবং তিন মেয়ের বাবা বেল্লাল পেশায় ভাড়াটে মোটরসাইকেল চালক ছিলেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানাধীন খালিশপুরের ১ নম্বর রোডের রায়হান চৌধুরীর মেয়ে মায়া চৌধুরী (১৮), পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার ইন্দ্রহাট বরচাকাঠি গ্রামের মিজানুর রহমান খোকনের মেয়ে সাদিয়া আক্তার (২০) এবং সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী এলাকার সিরাজ হাওলাদারের ছেলে অটোরিকশা চালক রানা হাওলাদার (২৮)।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) নিহতের স্ত্রী জানান, গতকাল দুপুরে তার স্বামী বেল্লাল খাওয়া শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ভোরে রানা নামে এক ব্যক্তি তার মেয়ের মোবাইল নম্বরে ফোন করে জানান যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর বেল্লাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পরে তিনি বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে বেল্লালের লাশ দেখতে পান।
নিহতের বাবা আব্দুল হক রাজ জানান, তার ছেলে রাজ সদর উপজেলার তালতলী এলাকার পিন্টু নামে এক যুবকের কাছ থেকে ১০,০০০ টাকা পেত। টাকা না দেওয়ায় রাজ পিন্টুর একটি মোবাইল সেট জব্দ করে। একই এলাকার স্বপন নামে আরেক ব্যক্তি রাজের কাছ থেকে মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে। এ নিয়ে পিন্টু, রাজ এবং স্বপনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সম্প্রতি পিন্টু রাজকে হুমকিও দেয়।
আব্দুল হক রাজ অভিযোগ করেছেন যে, রিপন রানা বেল্লালকে ব্যান্ড রোডে অবস্থিত তার কথিত সংবাদপত্রের অফিসে ডেকে পিন্টুর মোবাইল এবং ১০,০০০ টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর, রিপন ও রানা নামে দুই ব্যক্তি বেল্লালের লাশ হাত ধরে বিকেল ৪:১৫ টার দিকে তৃতীয় তলা থেকে নামিয়ে আনেন। এদিকে, রিপন রানা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান এবং রানা নামের ওই যুবক লাশ নিয়ে হাসপাতালে যান।
জেলা পরিষদ মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১১টার দিকে বেল্লাল হোসেন রাজ এবং রানা হাওলাদারসহ তিনজন কথিত অনলাইন পোর্টাল অফিসে প্রবেশ করে। এর কিছুক্ষণ পরেই রাত ১১:৫০ মিনিটে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দুই কল গার্ল সেখানে প্রবেশ করে। ভোর ৪:০৭ মিনিটে দুই কল গার্ল বাজার ভবন থেকে নেমে আসে। সেই সময় তাদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে টাকা ভাগাভাগি করতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই, ভোর ৪:১৩ মিনিটে, রিপন রানা এবং অটোরিকশা চালক রানা হাওলাদার একসাথে বেল্লাল রাজের মরদেহ নামিয়ে আনেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা জানতে পারেন যে, রিপন রানা নামের ওই যুবক একসময় চরমোনাই ট্রলার ঘাটে ট্রলার চালিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ‘ট্রলার রিপন’ নামে পরিচিত। এক পর্যায়ে রিপন ফেসবুক পেজে সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন ভুইফোড় সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য হয়ে যান।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান আমাদেরকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে থাকা চারজনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটককৃতরা দাবি করেছেন যে, তারা রাতে একসাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। সেই সময় ভবনের কাছে একটি উচ্চ-ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শে বেল্লাল মারা যান। তবে পরিবারের দাবি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। “এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

