জাতীয়

বৈদেশিক মুদ্রার সমস্ত উৎসেই ভাটা

বৈদেশিক মুদ্রার সব উৎস কমে গেছে। রপ্তানি, প্রত্যাবাসন আয় এবং উন্নয়ন সহায়তা রেয়াত – বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তিনটি ক্ষেত্র আগের তুলনায় কম। গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি ও রেমিটেন্স কমেছে। এই অক্টোবরেও উভয় ক্ষেত্রেই প্রবণতা একই। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি ঋণ মওকুফের পরিমাণ কমেছে।

অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা মনে করেন, বৈশ্বিক ও স্থানীয় সংকটের কারণে অর্থনীতির ওপর চাপ শিগগিরই শেষ হবে না। আগামী মাসে রপ্তানি আয়ের নিম্নগামী প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। সময়মতো পণ্য পাওয়া নিয়ে চিন্তিত ক্রেতারা। কলকারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে তাদের কাছে। অন্য কোনো প্রতিযোগী দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের এত ঘাটতি নেই। এ কারণে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সম্প্রতি রপ্তানি আদেশ ৪০ শতাংশ কমেছে। আগামী কয়েক মাসের রপ্তানি আয়ের প্রতিবেদনে এর প্রতিফলন ঘটবে। এ অবস্থায় তারা জ্বালানি সংকটের দ্রুত সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন, পাইপলাইনে বিদেশি ঋণ মওকুফের ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় হওয়া এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।

করোনার প্রভাব কাটিয়ে টানা ১৩ মাস ইতিবাচক থাকার পর গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি নেতিবাচক প্রবণতায় পড়ে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ শতাংশ। এই অক্টোবরের প্রথম ২০ দিনে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৯ শতাংশ। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি কমেছে – এটা নিশ্চিত। এই মাসের জন্য রপ্তানি আদেশ ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে. ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি কী হবে তা বলা যাচ্ছে না।

বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, দিন দিন জ্বালানি পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করছেন। রপ্তানি আদেশ দেওয়ার পরও অনেক ক্রেতা সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখার কথা বলছেন। আবার মন্দা পরিস্থিতিতে চাহিদা কমে যাওয়ায় ক্রেতাও সংকটে পড়েছেন। কিছু ক্রেতা পণ্য কিনছেন এবং দামও দিচ্ছেন না। কেউ কেউ পণ্য নেওয়ার পরও দাম দিতে সময় নিচ্ছেন। কয়েকটি কারখানার এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিজিএমইএ কয়েকটি ব্র্যান্ডের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিভিন্ন কারখানাকে তাদের রপ্তানি আদেশে উৎপাদিত পণ্য পর্যায়ক্রমে গ্রহণ এবং সহনীয় সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

সাধারণত, ক্রেতারা পণ্য প্রাপ্তির কমপক্ষে তিন মাস আগে রপ্তানি আদেশ দেয়। রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির জন্য ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) প্রয়োজন। বিজিএইএ এবং বিকেএমইএ সরকার থেকে (ইউডি) প্রদান করে। এ দুই প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের শেষ মঙ্গলবার পর্যন্ত ইউডি নেওয়ার হার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে। বিকেএমইএর সহ-সভাপতি আকতার হোসেন অপূর্ব বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ৪০ শতাংশ কমেছে। ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তির মূল্যের তুলনায় উৎপাদন খরচ অন্তত ৫ শতাংশ বেড়েছে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তার কারখানায় লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজেল দিয়েই উৎপাদন চালাতে হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি থাকায় বাড়তি দাম চাওয়া যাবে না। যদি পণ্যটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না আসে, তাহলে আপনি স্টকলট, ডিসকাউন্ট বা বিলম্বিত অর্থপ্রদানের সম্মুখীন হবেন।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির অনারারি ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার তিনটি উৎস থেকে আয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা রিজার্ভের ওপর আরও চাপ তৈরি হবে। একদিকে আমদানি দায় মেটানোর চাপ, অন্যদিকে ডলারের প্রবাহ বর্তমানের তুলনায় কম থাকলে পরিস্থিতি কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। তিনি মনে করেন, পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। তা না হলে রপ্তানি খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসার সম্ভাবনা আরও কমে যাবে। ব্যবসা করার সহজতাও বিবেচনা করা উচিত। বৈদেশিক ঋণের মওকুফ বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

মন্তব্য করুন