বৈদেশিক ঋণে ছাড় কমবে এবং সুদ পরিশোধে ব্যয়।অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অনুমান
আগামী তিন অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ও ছাড়ের পরিমাণ কমতে পারে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে নেওয়া বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের খরচ বাড়তে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আগামী কয়েক বছরের বৈদেশিক ঋণ-অনুদানের অনুমান সহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট কাটিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের ছাড় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৯৮৫ কোটি, ১ হাজার ৮৮ কোটি এবং ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ পর্যন্ত প্রতি বছর ৬০০ কোটি বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও অনুমান করা হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
আগের অর্থবছরে এটি ছিল ১ হাজার কোটি ডলারের কিছুটা বেশি। চলতি অর্থবছরেও প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলার, গত অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৯৫ কোটি ডলার।
গত অর্থবছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ কমেছে। গত অর্থবছরের এই সময়ে বৈদেশিক রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫.৯ বিলিয়ন ডলার। এ বছর এর পরিমাণ ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। ইআরডি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বৈদেশিক সাহায্য সংগ্রহ ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে বৈদেশিক রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ ছিল বাজেট সহায়তা বা উন্নয়ন সহায়তায় ১ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার যোগ করা।
এদিকে, বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার সমন্বয় পরিষদ এবং জনসম্পদ কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সঞ্চয়, মূল্যস্ফীতির হার, সরকারি-বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি ও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর বাংলাদেশকে এখনকার চেয়ে বেশি সুদে বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। তাই গ্রাজুয়েশনের আগেই স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেগবান করা প্রয়োজন। তবে সক্ষমতা না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋণের ছাড় বাড়ছে না। এটি আগের আর্থিক বছরের তুলনায় কম হওয়া উচিত নয়।
উল্লেখ্য, বৈদেশিক সহায়তার অংশ ব্যয় করতে না পারায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সংশোধনের সময় এ খাত থেকে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
বৈদেশিক ছাড়ের প্রক্ষেপণ সম্পর্কে ইআরডি বলেছে, এটি বর্তমান পাইপলাইন এবং আগের অর্থবছরের ছাড় বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, ভবিষ্যত বিতরণের প্রাথমিক অনুমানের উপর ভিত্তি করে, নমনীয় ঋণ এবং অনুদানের পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে এবং ভাসমান হারের ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে।
বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় বাড়ানোর জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে ইআরডি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করলেও, পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না।
অর্থ বিভাগে পাঠানো ইআরডি প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২০৮ মিলিয়ন ডলার এবং ঋণের অবস্থা ছিল ৫ হাজার ৯২১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডি বলেছে যে এই অর্থবছরে বহিরাগত ঋণের মূল এবং সুদের পরিশোধের জন্য বাজেট বরাদ্দ যথাক্রমে ১৮৪ কোটি ডলার ও ৯৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আর্থিক বছরের প্রথম আট মাসে সুদ পরিশোধ বেড়েছে।
রুশ সরকারের অর্থায়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৫০ কোটি ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের দুটি ঋণ চুক্তি রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই বিষয়ে, রাশিয়ান সরকার একটি চিঠির মাধ্যমে জটিলতার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অর্থ প্রদান স্থগিত করতে বলেছে। ফলস্বরূপ, ৩৩ কোটি ডলার মূল এবং এই দুটি ঋণের সুদ অপরিশোধিত রয়ে গেছে, ইআরডি জানিয়েছে।
বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে অতিরিক্ত খরচ হবে উল্লেখ করে ইআরডি বলেছে যে এমআরটি, মাতারবাড়ি এবং অন্যান্য মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন পুরোদমে চলছে। এসব প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের ঋণের সুদ পরিশোধও বাড়বে।