• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি নিচ্ছে না

    আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। আগস্টের শুরু থেকে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালগুলো রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি গুরুতর রোগী ছাড়া ভর্তি নিচ্ছে না। অনেকেই বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন। তবে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি নেই। তাই রোগীকে বিমুখ করার অভিযোগ রয়েছে।

    চাপ বেড়ে যাওয়ায় ভর্তি হওয়া রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর মহাখালীর ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ ডিএনসিসি হাসপাতালে। বর্তমানে চার শতাধিক শয্যা খালি রয়েছে। এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

    বাংলাদেশে ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছে।

    জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে যেকোনো সময় হাসপাতালগুলোর পুরো ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়তে পারে। তারা বলছেন, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ভর্তি করা ছাড়া উপায় নেই। আবার ভর্তি হলেও কোথাও রাখার জায়গা নেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

    ডেঙ্গু রোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। চিকিৎসক ও নার্সরা যথাসাধ্য সেবা দিচ্ছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও গতিশীল হতে হবে।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৭৬টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ১০ হাজার রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি হচ্ছেন। দৈনিক ছাড়পত্র দেওয়া হয় প্রায় দুই হাজার ২০০ জনকে। হাসপাতালে অতিরিক্ত ৩০০ রোগীর চাপ বাড়ছে। রাজধানীর তিনটি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে- মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল।

    সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব হাসপাতালের ওয়ার্ডের শয্যাগুলো মেঝেতে পড়ে আছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের বারান্দা, সিঁড়িতে চাটাই বা চাদর বিছিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ডেঙ্গু রোগীরা। রোগীদের অভিযোগ, জ্বর হলেই হাসপাতালে ভর্তি না করে বাড়িতে পাঠানো হয়। অন্যদিকে, দু-একদিন পর অবস্থার অবনতি হলে তিনি আবার হাসপাতালে গেলে দেরি করে আসার অভিযোগ করেন।

    ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, আমরা এমন কোনো রোগীকে ফেরত পাঠাই না যার অবস্থা গুরুতর বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। শয্যা স্বল্পতার কারণে মেঝেতে রাখলেও আমরা তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

    রোগী ভর্তি না করার অভিযোগ

    এদিকে, এভারকেয়ার, স্কয়ার, ইউনাইটেড, ল্যাবএইড এবং পপুলারের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলো শয্যা না থাকায় রোগী ভর্তি করছে না।

    ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ ধরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের ব্যবস্থাপনায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। নার্স ও চিকিৎসকরা ঠিকমতো আসেননি। শরীরের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল থাকায় ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।

    স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ৮০ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১৬ হাজার রোগী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭৬জন মারা গেছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ২ হাজার ৭৬ জন।

    ল্যাবএইড হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, এখানে ২৩টি আসন বরাদ্দ রয়েছে; ত্রিশের বেশি রোগী রয়েছে। যারা আসছে তারা সবাই ভর্তি নিচ্ছি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেসব শয্যার প্রতি মানুষের আগ্রহ কম।

    এভারকেয়ার হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম রোগী ভর্তি না হওয়ার বিষয়ে বলেন, আসন না থাকলে আমরা কীভাবে ভর্তি হব? স্কয়ার হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, শয্যা খালি না থাকায় প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন ফিরছেন। আমরা ভর্তি রাখার চেষ্টা করছি।

    মহাখালী হাসপাতালে উল্টো চিত্র

    কোভিডের সময়, মহাখালীতে ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালটি অস্থায়ীভাবে নির্মিত হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ায় সম্প্রতি হাসপাতালটিকে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ৮০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের অর্ধেকের বেশি বর্তমানে খালি রয়েছে। প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জটিলতায় ৪০০ থেকে ৪৫০ রোগী আসছেন। ৭০ থেকে ৮০ জনকে ভর্তি করা হচ্ছে। রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতাল থেকে রেফার করা রোগীরাও এ হাসপাতালে ভর্তি হন।

    ডিএনসিসি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল একেএম জহিরুল হোসেন খান বলেন, রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় আমাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ তুলনামূলক কম। ২৮ শতাংশের বেশি রোগী ।