বুয়েটের ছাত্র ফারদিনের মৃত্যু।বিনা দোষে দুই মাস জেলে থাকার দায় কে নেবে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় দুই মাস আটক থাকা বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরাকে অবশেষে জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার বুশরার জামিন মঞ্জুর করেন। মামলায় পুলিশ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তার জামিন বহাল থাকবে।
জামিন আদেশের পর বুশরার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, কোনো অপরাধ না করেও তাকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বুশরার চাচা মাজহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় বুশরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমরা এখন কারাগার থেকে তার মুক্তির অপেক্ষায় আছি। তিনি প্রশ্ন করেন, কোনো অপরাধ না করে বুশরা যে মানসিক আঘাতের মধ্য দিয়ে গেছেন তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এ ঘটনায় বুশরার বাবা বিধ্বস্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। তারা এখন তার পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ওবায়দুর রহমান জানান, আদালতের আদেশের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর বুশরার মুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুশরার আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, আদালত বুশরাকে জামিন দিয়েছেন। এরই মধ্যে জামিনের মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। সোমবার কাশিমপুর কারাগার থেকে বুশরা জামিন পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।
পরশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আমাতুল্লাহ বুশরা ৩০ নভেম্বর তার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। এরপর ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত ৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন। ওইদিন উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রোববার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। এর আগে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ১৬ নভেম্বর বুশরার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশিদ বলেছেন, পরশ হত্যা মামলায় বুশরার বান্ধবী জড়িত নয়। তিনি ১৫ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, পরশকে খুন করা হয়নি, আত্মহত্যা করা হয়েছে। আর বুশরার মৃত্যুর সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। তাই বুশরাকে বাদ দিয়ে দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হবে। তবে বাকিটা আদালতের সিদ্ধান্ত।
২৪ বছর বয়সী পরশ বুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। তার বন্ধু বুশরা ঢাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে পড়ে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রামপুরার বাঁশ্রী এলাকায় একটি মেসে থাকতেন। পাঁচ বছর আগে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বুশরা ফারদিনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
গত ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করা হয়।ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তার বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানা রামপুরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই মামলায় বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে এক নম্বর আসামি করা হয়। গত ১০ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়।