• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বিস্ফোরণের প্রভাব।বাতাসে পানিতে গ্যাস শরীরের প্রতিক্রিয়া করে

    সীতাকুণ্ড  বিস্ফোরণের শব্দ আশেপাশের সবার কানে । তবে বিস্ফোরণের মূল ঘাতক রাসায়নিক হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নীরবে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে, কারো খেয়াল নেই। এটি খুব বড় পরিসরে না হলেও মানবদেহে একটি সুপ্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসায়নিক বিস্ফোরণের ফলে সীতাকুণ্ডের আকাশে অ্যাসিডিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এটি পানিতেও মেশানো হয়। দূষিত পানি বঙ্গোপসাগর ও খালে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু বাতাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কার আছে?

    হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরণের পর বাতাসে নির্গত অম্লীয় গ্যাস সীতাকুণ্ডে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্যাসের কারণে তীব্র তাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই এসিড বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ফলে এলাকার মানুষের শ্বাসকষ্ট, শরীর ও চোখ চুলকায়। পরিবেশবিদ ও গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, দূষিত পানি গর্ভবতী নারীর শরীরে প্রবেশ করলে তা জীবন-মৃত্যুর সংকট সৃষ্টি করতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে পানির নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করেছে।

    পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, হাইড্রোজেন পারক্সাইড ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রাখতে হবে। এই রাসায়নিক তাপ এবং আলো সহ্য করতে পারে না। একদিকে, এটি একটি অক্সিডেন্ট বা অক্সিজেন হিসাবে কাজ করে, অন্যদিকে, এটি বিষাক্তভাবে হাইড্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এটি প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের পরে এবং ১০ কিলোমিটার এলাকায় অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেবে। তখন শ্বাসকষ্ট, চোখ, কান ও শরীরে চুলকানি এবং গর্ভবতী মহিলাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। গ্যাস মিশ্রিত পানি পান করলে বিষক্রিয়া এমনকি পশুর মৃত্যুও হতে পারে।

    এক প্রশ্নের জবাবে ইদ্রিস আলী বলেন, খুব অল্প পরিমাণে এই রাসায়নিক কাপড়ের রং পরিষ্কার করে এবং দাঁত ও কানের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। অত্যধিক বিস্তার মানুষ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে।

    চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, রোববার সকালে আমাদের একটি দল ডিপোতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষাগারে পরীক্ষামূলক কাজ চলছে। প্রশাসন বাঁধ দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করায় সাগরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই রাসায়নিকটি আসলে আমাদের জন্য ভয়ানক ক্ষতি করবে কি না তা দেখার বিষয়।

    সীতাকুণ্ডের স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেন, ডিপোতে বিস্ফোরণের ফলে উত্তর ও দক্ষিণে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমি পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়েও উদ্বিগ্ন।

    ডিপোর পাশের শীতলপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসান মো. রাজিব বলেন, ওই রাতে আকস্মিক বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। ঘরের টিভি ভেঙে পড়ছে। শোকেসের কাচের জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। পরদিন সকালে পাশের পুকুরে একটি কেমিক্যালের ড্রাম পড়ে থাকতে দেখি। আমরা চরম ঝুঁকিতে আছি। শরীরে চুলকানি শুরু হয়েছে। একই কথা বলেন কদমরসুল এলাকার বাসিন্দা মো. আখতারও।

    শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। সেখানে সংরক্ষিত হাইড্রোজেন পারক্সাইডের পাত্রটি বিস্ফোরিত হলে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে সরাসরি তাপ প্রবাহের সীমা ছিল চট্টগ্রামের উত্তর-পূর্বে আড়াই বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার। বিকেল সাড়ে ৫টার পর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার কমে যায়। সেই সঙ্গে গতির কিছুটা পরিবর্তন হয় এবং তাপপ্রবাহ বিপজ্জনকভাবে ডানদিকে চট্টগ্রাম শহরের দিকে অগ্রসর হয়। তবে তাপ প্রবাহের পরোক্ষ প্রভাব ১০ বর্গ কিমি পর্যন্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা আর্থ জুমের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে তাপ প্রবাহের গতিবিধির সর্বশেষ তথ্য তৈরি করা হয়েছে, বলেছেন ড. এ.এস. নন্দন মুখোপাধ্যায়।

    গবেষকদের মতে, সীতাকুন্ডের কুমিরা, বারবকুন্ড এবং মাধবাকু চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আগুন না ছড়ালেও তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে। সীতাকুন্ড এনভায়রনমেন্টাল এবং এনভায়রনমেন্টাল ক্রাইসিস এরিয়া। ফলে এই পরিমাণ তাপ এখানে প্রবাহিত হলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হবে। এটাই ভয়ের কারণ। এই রাসায়নিকের দুর্গন্ধ এবং ধোঁয়া রয়েছে। অত্যধিক তাপ এবং রাসায়নিক দূষণের ফলে পাতা ঝরে যাবে এবং মারা যাবে।

    মন্তব্য করুন