• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    বিসিকের বর্জ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদ, ফসল ও মাছ

    সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ও দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। ৫২ দশমিক ৬৪ একর আয়তনের এ দুই বিসিক এলাকার বর্জ্য, দূষিত পানি, দুর্বল পয়ঃনিস্কাশনসহ নানা কারণে স্থানীয়রা চরম ক্ষতিগ্রস্ত। দূষণে গ্রামীণ জনপদ, ফসলি জমি ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শিল্প এলাকার অব্যস্থাপনা ও উন্নয়ন না হওয়ায় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিক লোকসানের মুখে পড়েছেন।

    শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, বিসিকের বর্জ্য কখনও বাতাসে, কখনও পানিতে মিশে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সবার আগে ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে।

    খাদিমনগর বিসিক শিল্প এলাকা থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের দূরত্ব পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার। এর বর্জ্য মিশ্রিত পানি বিভিন্ন খালের মাধ্যমে সেখানেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে ধান ও মাছ চাষের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

    এ বিসিকের আশপাশের জনপদের অবস্থা আরও খারাপ। হাজার হাজার বাসিন্দা বর্জ্যের গন্ধের মধ্যে বাস করছেন। দূষিত পানির কারণে তাদের ধান ও মাছ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। বিসিকের ভেতরের অবস্থাও নাজুক। বিভিন্ন কোম্পানির খাদ্য, পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সেখানে গলানো হয় ব্যাটারিও। ব্যাটারির রাসায়নিক দ্রব্য শিশুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে- এমন শঙ্কা থেকে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতিনিধি দল এলাকার শিশুদের রক্ত সংগ্রহ করেছে।

    গোটাটিকর বিসিকের ভেতরের অবস্থাও নাজুক। বিশেষ করে বর্জ্য নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় তা ড্রেনেই পড়ে থাকে। বৃষ্টি হলে বর্জ্য আশপাশের বাড়িঘর ও ক্ষেতের জমিতে পড়ে।

    খাদিমনগর বিসিক পরিদর্শনকালে কথা হয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফছর আহমদের সঙ্গে। তিনি জানান, পরিবেশ দূষণের প্রেক্ষিতে বিসিকের সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দাবিতে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। তিনি জানান, বর্জ্য খালের পানিতে মিশে একাকার হয়ে যায়। শুস্ক মৌসুমে দুর্গন্ধের মাত্রা আরও বাড়ে।

    সম্প্রতি খাদিমনগর বিসিকের ভেতর ঘুরে প্রধান সড়কেই একটি কুকুর মৃত অবস্থায় দেখা যায়। কুকুরটির পচতে শুরু করলেও সরানোর উদ্যোগ কেউ নেননি। অভ্যন্তরীণ ড্রেনগুলোয় কাজ চলছে এক বছর ধরে। এসব ড্রেন থেকে সহজেই ময়লা অপসারণ হয় না। এ ছাড়া প্রবেশ ফটকের কাছেই বর্জ্যের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

    ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু হয় খাদিমনগর বিসিকের। এতে বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মী অনেকেই কারখানায় অবস্থান করেন। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে।

    স্থানীয়রা জানান, বিসিকের বর্জ্য হাওরে গিয়ে পড়ে। এতে স্থানীয় মাকুলি, হাকুলি, মেলান বিল, টেকর হাওরসহ কয়েকটি হাওরে ধান ও মাছের ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বদরুল ইসলাম আজাদ জানান, দাশপাড়া, গুচ্ছগ্রাম, লালকাটঙ্গি, ধনকান্দি, এলাকায় দুর্গন্ধের জন্য বসবাস করা দায়। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলী আহমদ জাকির জানান, মেলান হাওরে ৭৫ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অন্য হাওরগুলোতেও একই অবস্থা। পানি শরীরে লাগলে অদ্ভুদ ধরনের জ্বালা করে।

    বিসিক থেকে পাঁচ-সাত কিলোমিটার দূরের গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ জানান, বর্জ্য মিশ্রিত পানি কুশি নদীতে গিয়ে পড়ে। এতে বাঘা হাওরের একাংশে মৎস্য ও ধান চাষে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। মাছ মরে যায়। জমি চাষ করতে পারেন না অনেকেই। রোগবালাই লেগেই থাকে।

    এ প্রসঙ্গে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, বিসিকের বর্জ্য পানি মিশ্রিত হওয়ার পর সেই পানি মানুষের শরীরে লাগলে স্কিনসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ পানি ধান ও মাছের জন্য ক্ষতিকর।

    বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি কাজী ময়নুল হোসেন বলেন, এ শিল্প এলাকায় উল্লেখ করার মতো উন্নয়ন হয়নি। ড্রেন নেই, রাস্তা ঠিক নেই। বিদ্যুৎ ঘাটতি, জলাবদ্ধতা ও ড্রেনসহ নানা সমস্যার কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়ী লোকসানে আছেন। এ অবস্থায় চললে শিল্পপ্রতিষ্ঠান এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মঈন উদ্দিন জানান, বৃষ্টি হলে রাস্তার পানি গুদামে ঢুকে লাখ লাখ টাকার মালপত্র নষ্ট হয়।

    এ প্রসঙ্গে বিসিক সিলেট জেলার উপমহাব্যবস্থাপক সুহেল হাওলাদার বলেন, বিসিক খাদিমনগরের অধিকাংশ কারখানার ব্যক্তিগত সুরক্ষা রয়েছে। যাদের নেই তাদের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিসিক এলাকায় বসতি থাকার কথা নয়। তারপরও সেখানে লোকজন থাকছে। জনপদে বর্জ্যের প্রভাবের বিষয়টি কীভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। গোটাটিকর বিসিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে তিনি জানান, সেখানে কাজ হয়েছে। ১৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় উন্নয়ন কাজ হবে।

     

     

    মন্তব্য করুন