বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স।অযত্ন অনাদরে ছারখার ভারতের উপহার
একটা কথা আছে- ‘দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মানে বোঝে না।’ ভারতের অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেওয়াটাও ‘দাঁতের অর্থ’ না বোঝার মতো। ১৬৩ কোটি টাকার ১০৯টি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হচ্ছে। এসব অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের সেবায় কোনো কাজে আসছে না। চারটি ধাপে দেশের ৬৪টি জেলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধাসহ বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়। তবে দেড় বছরেও ব্যবহার করা যায়নি ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স। তারা খোলা আকাশের নিচে। বাকি ৬৯টি মাসে, এক বা দুই দিন সাধারণ রোগীর দ্বারা বহন করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালা না থাকা, জ্বালানি বরাদ্দে জটিলতা, নার্স ও চালকের সংকটের কারণে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। হাসপাতাল চত্বরে খোলা রাখায় অ্যাম্বুলেন্সের আয়ুষ্কাল নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে যোগ দিতে গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখন ভারত সরকার প্রধান উপহার হিসেবে ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এই অ্যাম্বুলেন্সগুলিতে একটি আইসিইউ পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, জরুরী ওষুধ, ইনকিউবেশন সেট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, সাকশন মেশিন, নেবুলাইজার মেশিন, ক্যাথেটার, বিপি স্টেথো, পালস অক্সিমিটার, কার্ডিয়াক মনিটর পালস, স্যাচুরেশন, তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র, মনিটর সিস্টেম, রোগীর হৃদস্পন্দন ইত্যাদি রয়েছে। ভেন্ট্রিকুলার টাকাইকার্ডিয়া (ভিটি) এবং ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন (ভিএফ) ইত্যাদি।
রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ১১টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি অ্যাম্বুলেন্স এখনো ব্যবহার করা হয়নি। এসব অ্যাম্বুলেন্স মাঝে মাঝে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে রোগী বহন করতে দেখা যায়। এসব হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সগুলো খোলা আকাশের নিচে ধুলোয় ঢাকা। দীর্ঘদিন একই জায়গায় পড়ে থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে ব্যাটারি। বায়ুচলাচল, অক্সিজেন এবং পালস অক্সিমিটার প্রত্যাহার। অন্যান্য যন্ত্রপাতিও ঠিকমতো নেই অ্যাম্বুলেন্সে। তবে এসব খোলা রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। অনেক চালক অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বের হতে চান না কারণ সেগুলো আকারে বড়। শুধু ঢাকার মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যানবাহন ব্যবস্থাপনা ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, অ্যাম্বুলেন্স মাসে দুই থেকে তিনবার বের হয়। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া পেতে একদিন আগে পরিচালককে জানাতে হয়। রোগীর স্বজনদের ডাক্তার ও নার্সের ব্যবস্থা করতে হয়। এই অ্যাম্বুলেন্স প্রতি কিলোমিটারে দিতে হয় ১০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সহকারী সচিব মামুন মাহবুবকে সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালের বাইরে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দেওয়া হয় না। চিকিত্সকরা জটিল রোগীদের পরিচালনা করতে পারদর্শী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো পড়ে আছে। বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ডিভাইস অ-কার্যকর। খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইনস্টিটিউট (নেটর), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সেরও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম বলেন, “এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। আমি এ বিষয়ে ফোনে কথা বলব না। অফিস টাইমে এলে কথা হবে বলে তিনি কেটে দেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ খলিলুর রহমান বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে অনেক সুবিধা নেই। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এটি এখন সাধারণ রোগীর যত্নে ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার সাবেক পরিচালক ফরিদ উদ্দিন মিয়া বলেন, বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সে অপারেশনের সময় রোগীর নিবিড় পরিচর্যার জন্য একজন চিকিৎসক ও একজন নার্স থাকা বাধ্যতামূলক। তবে এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো কীভাবে পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনার জন্য নতুন নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর কীভাবে অ্যাম্বুলেন্সগুলো দ্রুত গতিশীল করা যায় সে বিষয়ে নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। কিছুদিনের মধ্যে নতুন নীতিমালা আসতে পারে।