জাতীয়

বিরোধী দলকে আটকাতে জনগণকে জিম্মি

বিরোধী দলের কর্মসূচিতে জনসমাগম ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধের রাজনীতির মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঠেকাতে মালিকদের সঙ্গে গণপরিবহন ‘বন্ধ’ করেছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন বিএনপির বিরুদ্ধে অঘোষিত হরতালের এই কৌশল ‘প্রয়োগ’ করছে। ফলে সমাবেশে মানুষের সমাগম না কমলেও সাধারণ মানুষ অনেক সময় ভোগান্তিতে পড়েন।

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে ময়মনসিংহের মতো খুলনায়ও বাসসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ। খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন জানান, আগামী ২২ অক্টোবর গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।গত মঙ্গলবার রাতে মালিক-শ্রমিকদের যৌথ বৈঠকের পর। তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবার খুলনা থেকে বাস ছাড়বে না। বাইরের জেলা থেকে বাস প্রবেশ করবে না।

বিএনপির ২২ অক্টোবরের জনসভা ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার বা আওয়ামী লীগ কেউই কিছু বলেনি। বিএনপির কর্মসূচিতে বাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা রয়েছে। মালিকরা বাস চালাতে চায় না। তাই বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমিতি।

অতীতে বিরোধী দলের কর্মসূচি ঠেকাতে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও তা ঘোষণা করা হয়নি। গত শুক্র ও শনিবার ময়মনসিংহগামী সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও আগাম ঘোষণা দেননি মালিকপক্ষ। আইনে বাস বন্ধের অনুমতি না থাকলেও মালিকপক্ষ ঘোষণা দিয়ে গণপরিবহন বন্ধ করে দিচ্ছে।

এর আগে ময়মনসিংহের লাখ লাখ যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। শহরে আটকা পড়েছে বহু মানুষ। পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা থেকে ময়মনসিংহগামী অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করেনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহড়া ও সড়ক পাহারা দেন। হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। একই দুর্ভোগ পোহাতে হবে খুলনার যাত্রীদেরও। এটি প্রতিরোধে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। তবে যানবাহন সচল রাখার দায়িত্ব সরকারের।

ময়মনসিংহে গাড়ি নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। খুলনার নেতারাও একই দাবি করেছেন। সরকারি দলের নির্দেশে গাড়ি থামানো হয়েছে- কাগজে কলমে এমন কোনো প্রমাণ নেই। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নির্দেশেই গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। অতীতে বিএনপির নির্দেশে তৎকালীন পরিবহন নেতারা একই কাজ করতেন।

খুলনায় গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। অনুমতি থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ করার কৌশলের নীতি-নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জনসমর্থন দেখাতে বড় সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। জনসমাগম বন্ধ করে বিএনপির জনসমর্থন নেই তা দেখানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। সেজন্য গণপরিবহন বন্ধের কৌশল নেওয়া হয়েছে যা জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলেছে বলে উভয় পক্ষের সূত্র জানায়।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, জনসমাগম বানচাল করতে সরকারের নির্দেশে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ধারাবাহিকভাবে এ অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ মন্তব্য করেননি। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত মালিকদের। এতে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিএনপিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, পুলিশ কাউকে বাস বন্ধ রাখতে বলেনি। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয়।

রাজনৈতিক দলের কৌশল নির্বিশেষে, মালিকরা রুট পারমিটের শর্ত অনুযায়ী যাত্রী বহনের জন্য নিবন্ধিত যানবাহন বন্ধ করতে পারবেন না। এমনটা করলে রুট পারমিটও বাতিল হয়ে যেতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাস বন্ধ করে যাত্রীদের দুর্ভোগ করার অধিকার মালিক-কর্মচারীদের নেই। বিরক্ত হলে, বিআরটিএ আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিকে (RTC) রুট বিধিনিষেধ বাতিল করার সুপারিশ করে। তারপর রুট পারমিট বাতিল করা হয়। শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী মালিকরা ব্যবসা বন্ধ করতে পারলেও ধর্মঘট ডাকতে পারে না। তবে শ্রমিকরা ১৫ দিনের নোটিশ দিয়ে ধর্মঘটে যেতে পারেন।

গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। রুট পারমিটের শর্ত লঙ্ঘন করে বাস চলাচল বন্ধ করলে বিআরটিএ শাস্তি দেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খোঁজ নেওয়া যাক।

বিরোধী দলগুলো ধর্মঘটের ডাক দিলে পরিবহন মালিক সমিতি নোটিশ দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে। অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন

মন্তব্য করুন