বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্যের লড়াই।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২১ দিনে ১০ খুন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝিরা (রোহিঙ্গা নেতা) স্বেচ্ছাসেবকদের নাইট গার্ডের দায়িত্ব অর্পণ করছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ ১৫-২০ সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তিনজনকে গুরুতর আহত করে। ৮ ফেব্রুয়ারি হামলার পর আশেপাশের লোকজন আহতদের ক্যাম্পের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। আহতদের মধ্যে আজিমুদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সেই শিবিরের প্রধান মাঝি ছিলেন আজিমুদ্দিন উখিয়ার।
আধিপত্য বিস্তারের জন্য আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি রোহিঙ্গাদের। শুধু এই ঘটনাই নয়, চলতি মাসে উখিয়ায় কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার বালুখালী ক্যাম্পে গুলিতে দুই রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়। তারা হলেন- মোহাম্মদ রফিক ও রফিক উল্লাহ। দুই ব্যক্তিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) গুলি করে হত্যা করেছে যখন তারা তথ্য দিয়ে আইন প্রয়োগকারীকে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেছে। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় তাজনীমারখোলা ক্যাম্পে আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে হাফেজ মাহবুব নিহত হন। তিনি এপিবিএন-এর সোর্স ছিলেন।
এ মাসে নিহতদের মধ্যে অন্তত ছয়জন ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র। মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য দেওয়ার জন্য তাদের হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ৪৫ জন রোহিঙ্গাকে তাদের বাড়িঘর থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেছে। গতকাল সকালে উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা নেতারা দিনের বেলা ক্যাম্পে অবস্থান করলেও সন্ধ্যার আগেই ক্যাম্প ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
ক্যাম্প-২ মাঝি মোহাম্মদ আমিন বলেন, “সম্প্রতি আরএসও আরসার দীর্ঘদিনের একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, খুন বেড়েছে। মানে সাধারণ রোহিঙ্গারা। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে যৌথ অভিযানের পাশাপাশি। সেনাবাহিনী প্রয়োজন।ক্যাম্প-১-এর নাবিক মোহাম্মদ রফিক বলেন, আরসার হামলার আশঙ্কায় পরিবারটি রাতে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে কুতুপালং এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, অনেক রোহিঙ্গা রাতে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আমাদের বসতিতে আশ্রয় নেওয়ায় আমি উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোহিঙ্গা নেতা জানান, নিরাপত্তার কারণে রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা বিকেল ৪টার আগেই ক্যাম্প ত্যাগ করেন। বিকেল ৫টার পর পুলিশের টহল থাকে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা অনিরাপদ হয়ে পড়ে। পরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গোলাগুলি ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কমিউনিটি নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, আরসার প্রধান কমান্ডারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের শতাধিক জনের বিরুদ্ধে থানায় ১০-১২টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আসামি ধরা পড়লেও মূল হোতাদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। স্বাগতিকদের অনেকেই মিয়ানমারের পাহাড়ে লুকিয়ে আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন, আরাকান স্যালভেশন আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আধিপত্যের কারণে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হচ্ছে। . অনেকে ধরা পড়ে। কিন্তু সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের আইনের আওতায় আনা যাবে না। স্বাগতিকদের অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছেন।